নয় ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি ১৮,০০০ কোটি টাকার বেশি
বেসরকারি খাতে অন্তত ৯টি ব্যাংক তীব্র তারল্য সংকটে ভুগছে। এসব ব্যাংকের চলতি হিসাবের ঘাটতি ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এস আলম মুক্ত করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭ হাজার ২৬৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকার ঘাটতি রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকার ঘাটতি স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের। ২ হাজার ৩৪২ কোটি টাকার ঘাটতি নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে ন্যাশনাল ব্যাংক।
এছাড়া, ইউনিয়ন ব্যাংকের ২ হাজার ২০৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ২ হাজার ২০১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ৩৮০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৩৯ কোটি ৩৯ লাখ।
এছাড়া, পদ্মা ব্যাংকের চলতি হিসাবে ২৩৪ কোটি ৪৮ লাখ এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৯৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার ঘাটতি রয়েছে।
সম্প্রতি এস আলমমুক্ত ৭টি ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। তবে এখন পর্যন্ত পাঁচটি ব্যাংককে গ্যারান্টি দিতে চুক্তি সই করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অপর দুটি ব্যাংক চুক্তি সইয়ের অপক্ষোয় রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি হয়ে গেলেই সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো অন্যান্য সবল ব্যাংক থেকে ধার নিতে পারবে, যেখানে গ্যারান্টার থাকবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুশনে আরা শিখা বলেন, "হিসাবটি প্রতিদিনই পরিবর্তন হচ্ছে। তাই ব্যাংকভিত্তিক তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এসব ব্যাংকের সমন্বিত ঘাটতি প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো।"
জানা যায়, কোনো ব্যাংকের চলতি হিসাব ঋণাত্মক থাকলে আরটিজিএস বা বিএসিএইচের মাধ্যমে চেক নিষ্পত্তি করা যায় না। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ আনুকূল্য নিয়ে কৌশলে এস আলমের ব্যাংকগুলোর যেকোনো অঙ্কের চেক অন্য ব্যাংকে জমা দিয়ে নিষ্পত্তি করা হচ্ছিল। তবে গত ১৪ আগস্ট থেকে সেই সুযোগ সীমিত করা হয়। ওইদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক নির্দেশনায় ১ কোটি টাকার বেশি চেক নগদায়ন না করতে সব ব্যাংকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় দুই বছর ধরে এসব ব্যাংক বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণ করতে পারছে না। ব্যাংকটির হাতে থাকা সব উপকরণ বন্ধক রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে ফেলেছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য ব্যাংক থেকে ধার-দেনা করার কোনো উপকরণ এসব ব্যাংকের হাতে নেই। আবার সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতি হলে যে জরিমানা দিতে হয়, তাও পরিশোধের সুযোগ নেই। অথচ ঋণ বিতরণ বন্ধের নির্দেশ না দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে চলতি হিসাবে ঋণাত্মক থাকার পরও এস আলমের ব্যাংকগুলোকে লেনদেনের সুযোগ দিয়ে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এস আলমের ৭টিসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নামে-বেনামে এসব ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ বের করে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, সংকটে পড়া এসব ব্যাংকের মধ্যে ইতোমধ্যে পাঁচটি ব্যাংককে গ্যারান্টি দিতে চুক্তি সই করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত রোববার সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এ সংক্রান্ত চুক্তি হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার। আর গত বৃহস্পতিবার চুক্তি হয় ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, যেসব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, তারা এখন আন্তঃব্যাংক বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করে বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে গ্যারান্টির জন্য পাঠাবে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্যারান্টির আওতায় কোন ব্যাংক কত টাকা নিতে পারবে তা বিবেচনা করে অনুমতি দেবে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের মতো টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দেবে না। তবে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক মুদ্রা সরবরাহের মাধ্যমে এ সহায়তা নিতে পারে।
গভর্নরের এমন বক্তব্যের পর অন্তত ৭টি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির জন্য আবেদন করে।