তুরস্কের টাম হ্যাঙ্গার্সের সঙ্গে যৌথভাবে হ্যাঙ্গার উৎপাদন করছে মেঘনা গ্রুপ
বিশ্বব্যপী রিটেইলারদের কাছে রপ্তানির জন্য তুরস্কের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান টাম হ্যাঙ্গার্সের সাথে যৌথভাবে প্লাস্টিকের পোশাক হ্যাঙ্গার উৎপাদন করছে মেঘনা গ্রুপ।
বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠান দুটি যৌথভাবে টাম হ্যাঙ্গার্স বাংলাদেশ লিমিটেড নামে পণ্য উৎপাদন করছে। এ যৌথ উদ্যোগের ৫১ শতাংশ মালিকানা টাম হ্যাঙ্গার্সের ও ৪৯ শতাংশ মালিকানা মেঘনা গ্রুপের।
গত ৪ অক্টোবর টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নতুন একটি নতুন কারখানায় পরীক্ষামূলক পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে ১৬টি মেশিনে পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। একটি মেশিনের দৈনিক ৩০ হাজার হ্যাঙ্গার উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্যমাত্রা আছে ৪০টি মেশিনে পণ্য উৎপাদন করা, যেখানে মোট বিনিয়োগ হবে ৭.৫ মিলিয়ন ডলার এবং কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৫০০ জন মানুষের।
মেঘনা গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ডেভেলপমেন্টের প্রধান মো. সহিদুল্লাহ শহিদ জানান, তারা তিন মাস পরীক্ষামূলক উৎপাদন করবেন।
তিনি বলেন, এ কারখানায় নতুন হ্যাঙ্গার তৈরির পাশাপাশি বিদেশ থেকে সংগৃহীত পুরোনো হ্যাঙ্গার পুনর্ব্যবহার করেও নতুন পণ্য উৎপাদন করবেন। এতে কাঁচামাল পুনর্ব্যবহার করা যাবে।
যুক্তরাজ্য, চীন, জার্মানি, ইতালি, ভারত ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বজুড়ে ৫০টিরও বেশি দেশে টাম হ্যাঙ্গার্সের ব্যবসায়িক কার্যক্রম আছে। প্রতিষ্ঠানটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোর শীর্ষস্থানীয় হ্যাঙ্গার সরবরাহকারী।
কোম্পানিটির ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, টাম হ্যাঙ্গার্স ১৯৭২ সাল থেকে বৈশ্বিক টেক্সটাইল ও পোশাক বাজারের জন্য হ্যাঙ্গার উৎপাদন ও বিক্রি করছে।
টাম হ্যাঙ্গার্সের কো-সিইও পল উইলিয়ামস ও মেঘনা গ্রুপের অন্যান্য পরিচালকরা কারখানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শহিদ বলেন, তাদের তিনতলা কারখানাটি বর্তমানে দুই একর জমিজুড়ে রয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। কারখানাটি ভবিষ্যতে পাঁচতলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে।
তিনি আরও বলেন, 'অডিট শেষে আমরা সরাসরি রিটেইলারদের কাছে পণ্য পাঠানো শুরু করব। এই সময়ে যে পণ্য উৎপাদন করব, সেগুলো মজুত রাখব।'
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি টেকসই উৎপাদন নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারখানাটিতে পুরোপুরি সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। কারখানায় প্রাথমিকভাবে ৫০০ কিলোওয়াট সৌরবিদ্যুতের লাইন স্থাপন করা হয়েছে।
শহিদ আরও জানান, তারা মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার ও এইচঅ্যান্ডএম-এর মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর জন্য হ্যাঙ্গার সরবরাহকারী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
'এই ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ব্র্যান্ডকে পণ্য সরবরাহ করবে, তারা আমাদের কাছ থেকে হ্যাঙ্গার নেবে। তবে আমরা সরাসরি রপ্তানিও করব,' বলেন তিনি।
শহিদ জানান, নতুন কারখানাটির পাশেই মেঘনা গ্রুপের নিজস্ব উৎপাদন ইউনিটে প্লাস্টিকের বোতাম, লেবেলসহ অন্যান্য পোশাকের উপকরণ উৎপাদন হচ্ছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইল এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৮০০টি প্যাকেজিং ও অ্যাকসেসরিজ উৎপাদন কারখানা রয়েছে। এ কারখানাগুলো বোতাম, প্লাস্টিকের হ্যাঙ্গার, পলিব্যাগ, লেবেল, চেইন ও সুতাসহ প্রায় ৪০ ধরণের পণ্য উৎপাদন করে, যা থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৮.২২ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার এসেছে সরাসরি রপ্তানি থেকে।
সংগঠনটির উপদেষ্টা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন মতি টিবিএসকে বলেন, গত বছর সরাসরি হ্যাঙ্গার রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ৩০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। বিদেশি বিনিয়োগ এই শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
টেকসই উন্নয়নের বিষয়ে সহিদুল্লাহ শহিদ বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রতিকূল জলবায়ু ঝুঁকির মধ্যে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতে চক্রাকার (সার্কুলার) অর্থনীতিতে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। এজন্য উৎপাদন কাঠামোতে রিসাইকেল প্রক্রিয়ায় আরও মনোযোগ বাড়ানোর জন্য বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো পণ্য উৎপাদনকারীদের উৎসাহিত করছে।
বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩-এ এইচঅ্যান্ডএম গ্রুপের স্টেকহোল্ডার এনগেজমেন্ট এবং পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার ফয়সাল রাব্বি বলেন, রিসাইকেল করা কাঁচামাল ও কার্বনমুক্তকরণ তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে, কারণ এগুলো শীঘ্রই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে প্রবেশের শর্ত হতে পারে।
বাংলাদেশে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প রপ্তানিমুখী পোশাকপণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ অ্যাকসেসরিজ সরবরাহ করে। এখন খাতটি বিশ্ববাজারের চাহিদা পূরণের একটি হাব হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখছে।