খেলাপি ঋণের হার ১৮ শতাংশ বাড়তে পারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেচেন, ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণের আনুষ্ঠানিক যে হার ১২.৫ শতাংশ, প্রকৃতপক্ষে তার চেয়েও ১৮ শতাংশ বাড়তে পারে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তাদের খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রোববার দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই বক্তব্য দেন।
প্রধান উপদেষ্টাকে গভর্নর মনসুর বলেন, 'আমরা দেশের আর্থিক খাতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। সামনে খেলাপি ঋণ ২৫-৩০ শতাংশে পৌঁছে যাবে। এখন যা সাড়ে ১২ শতাংশ। আগামী মাসে তা ১৫ শতাংশ, এরপর ১৭ শতাংশ হয়ে ধীরে ধীরে ৩০ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে। এই খেলাপি আগেই হয়ে আছে। এখন হিসাবে তা আসবে। এটা কমিয়ে আনতে আমরা কাজ শুরু করেছি।'
গভর্নর ব্যাখ্যা করে বলেন, 'বর্তমানে ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে – এতে এই সরকারের করার কিছু নেই, এগুলো আগের সরকারের আমলেই খেলাপি ছিল। যা দীর্ঘদিন গোপন করা হয়েছিল, এখন বের হয়ে আসছে। এই খেলাপি ঋণ কিভাবে নামিয়ে আনা যায়– সেটা হবে আমাদের অন্যতম পদক্ষেপ।'
'বর্তমানে ব্যাংকখাতের খেলাপি ঋণের অর্ধেক হচ্ছে, কতিপয় গ্রুপের (শিল্পগোষ্ঠীর), আর বাকি অর্ধেক হচ্ছে পুরো দেশের ঋণগ্রহীতাদের। ২০১৭ সাল থেকে ব্যাংকখাত থেকে ব্যাপক পরিমাণ টাকা বের হয়ে বর্ধিতভাবে পাচার হয়েছে। শ্বেতপত্রে এসব বিষয় দলিল হিসেবে থাকা উচিত বলে মনে করি,' বলেন গভর্নর।
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, 'আমাদের ইনস্টিটিউশনাল স্ট্রেংথ (প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি), কমপ্ল্যায়েন্স (বিধিবিধান প্রতিপালন) এর ক্ষেত্রে আরও জোর দিতে হবে। সেক্ষেত্রে তাদের যে ইস্যুগুলো রয়েছে – সেগুলোকেও কনসালটেটিভ (আলোচনার) উপায়ে সমাধান করতে হবে।'
ড. মনসুর বলেন, আমরা ব্যাংকগুলোর সম্পদ পুনরুদ্ধারের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাপোর্ট নিয়েছি। সম্পদের মান-পর্যালচনা শুরু হবে ডিসেম্বরের ১১ তারিখ থেকে। প্রথমে আমরা ছয়টি করে বারোটি ব্যাংকের সম্পদ বা ঋণের মান পর্যালোচনা করব। পরবর্তীতে আরো ২৫টি ব্যাংককে এর আওতায় নিয়ে আসা হবে। যার মাধ্যমে আমরা জানতে পারব ব্যাংকগুলো কোন পর্যায়ে রয়েছে। এই যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল অনেক প্রতিষ্ঠানই যুক্ত রয়েছে।
'ব্যাংক রক্ষা করা আমাদের (বাংলাদেশ ব্যাংকের) কাজ নয়, আমরা অন্যতম কাজ ব্যাংকের ডিপোজিটরদের (আমানতকারীদের) নিরাপত্তা দেয়া। আমরা সেটাই করছি। তবে এক্ষেত্রে কোন ব্যাংকের নাম কি হবে, পরবর্তন আসবে কি আসবে না – সেটা অন্য বিষয়। আমরা তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে তারল্য সুবিধা দিচ্ছি। যার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের আস্থা ফিরে আসবে,' তিনি যোগ করেন।