স্বায়ত্তশাসন, মুদ্রানীতির পরিবর্তন ও মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে আইএমএফ-বাংলাদেশ ব্যাংক বৈঠক
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-এর (আইএমএফ) একটি মিশন বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দেশের মুদ্রানীতির পরিবর্তন, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ সংশোধন এবং মুদ্রা বিনিময় হার ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা সাংবাদিকদের জানান, আইএমএফ-এর মিট টার্ম রিভিউ মিটিং [মধ্যবর্তী পর্যালোচনা সভা] মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত নতুন মুদ্রানীতির মধ্যে এই পরিবর্তনগুলো অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে।
এর আগে জুন মাসে "বাংলাদেশ: টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিপোর্ট-ইন্টারেস্ট রেট করিডর অ্যাডপশন" শীর্ষক প্রতিবেদনে আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন এবং দায়বদ্ধতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিল। এটি মূলত মূল্য স্থিতিশীলতাকে মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্য হিসেবে স্থাপন করার প্রস্তাবনা ছিল।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এই সংশোধনটি ২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালের জন্য ঘোষিত রিজার্ভ মানি ভিত্তিক মুদ্রানীতি থেকে নতুন ইন্টারেস্ট রেট ভিত্তিক মুদ্রানীতিতে পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মুখপাত্র হুসনে আরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আইএমএফ-এর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকারের সঙ্গে শেষ বৈঠকের পর আইএমএফ এই বিষয়ে পরিষ্কার বক্তব্য দেবে।
বাংলাদেশ আইএমএফ-এর ৪.৭ বিলিয়ন ডলার বিলিয়ন ঋণ সহায়তার চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার জন্য ১২টি শর্ত পূরণের পথে রয়েছে। তবে রাজস্ব সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রায় কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে।
এদিকে, আইএমএফ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাদাকিসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে এসেছে এবং ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে অবস্থান করবে।
একজন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত তিন মাস ধরে দেশের মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে। যদি এই স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকে, তবে গ্রাহকরা ডলার ধরে রাখার প্রতি আরও আগ্রহী হতে পারেন।
তিনি বলেন, "এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার রেটের ওঠানামা অনুমোদনের জন্য একটি নতুন ব্যবস্থা নিয়ে ভাবছে। ক্রলিং পেগ সিস্টেম সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে।"
আইএমএফ-এর পরামর্শ অনুসারে, বাংলাদেশ মে মাস থেকে ক্রলিং পেগ ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করছে।
আইএমএফ-এর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও শক্তি মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে।
আইএমএফ-এর শর্তাবলির মধ্যে রয়েছে– নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ, বাজেট ঘাটতি, আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য, রিজার্ভ মানি, কর রাজস্ব, অগ্রাধিকার সামাজিক ব্যয় এবং সরকারের মূলধন বিনিয়োগ।
আইএমএফ-এর লক্ষ্য অনুযায়ী, সরকারকে জুনের মধ্যে ৩.৯৪ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে হতো।
অর্থ বিভাগ জানায়, সরকার জুনে ৩.৬৯ লাখ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছে, যা আইএমএফ-এর লক্ষ্য থেকে ২৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা কম।
আইএমএফ-এর আরেকটি বড় শর্ত ছিল, দেশের নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ বাড়ানো। তবে, ২০২৩ সালের মে মাসে আইএমএফ সরকারের অনুরোধে এই লক্ষ্যটি কমিয়ে দেয়।
প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল, ৩০ জুনের মধ্যে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ২০.১১ বিলিয়ন ডলারে নেওয়া। তবে, মে মাসের শেষে আইএমএফ এটি কমিয়ে ১৪.৭৯ বিলিয়ন ডলার করে দেয়।
৩০ জুনের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ১৬.৭০ বিলিয়ন ডলার। ঋণ কর্মসূচির আগের প্রতিটি কিস্তিতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল বাংলাদেশ।