ডেফার্ড এলসির সময়সীমা ১৫ মাস চান ব্যবসায়ী নেতারা, ঋণখেলাপির সময়সীমাও বাড়ানোর দাবি
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অভ বাংলাদেশ চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) নেতারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে দাবি জানিয়েছেন, ডেফার্ড ঋণপত্রের (এলসি) দায় পরিশোধের সময়সীমা ছয় মাস থেকে বাড়িয়ে ১৫ মাস চান তারা। এছাড়া ঋণখেলাপির সময়সীমাও বাড়িয়ে ৯ মাস করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিদল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইস মনসুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই দাবি জানান।
একইসঙ্গে তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সুদের হার স্থিতিশীল রাখা, ডলারের জোগান স্বাভাবিক রাখাসহ অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের নীতিসহায়তা দেওয়ার সুপারিশও করেছেন।
বৈঠক শেষে এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, 'বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা ধরে রাখা ও বিনিয়োগের স্বার্থে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার স্থিতিশীল রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সুদের হার ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে বলেছি।'
তিনি বলেন, অপরিশোধিত ঋণের কিস্তি যে তারিখে পরিশোধে জন্য নির্ধারিত থাকবে সে তারিখ থেকে পরবর্তী ৬ মাস অতিক্রম হওয়ার পর ঋণটি খেলাপি হয়। 'শোনা যাচ্ছে খুবই শিগগিরই এই সময় তিন মাস করা হবে। আমরা গভর্নরের কাছে আবেদন করেছি সময়সীমা তিন মাস থেকে নয় মাস করার জন্য।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'ডেফার্ড এলসি সময়সীমা ছয় মাস থেকে ১৫ মাস বাড়ানো খুবই কঠিন। বাইরের ব্যাংকগুলোকে কোনো কোনো এলসির ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক পরিশোধ করতে হয় ব্যাংকগুলোর, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছয় মাস সময় পায়।'
তিনি বলেন, 'এক্ষেত্রে গ্রাহকের ঝুঁকি রয়েছে। যেমন, একজন গ্রাহক যে ডলার রেটে আমদানি করেছেন, তা পরিশোধের সময় রেট অনেক বেড়ে যেতে পারে। তাই ডেফার্ড এলসি ছয় মাসই যুক্তিযুক্ত।'
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডেফার্ড এলসির সময়সীমা বাড়ালে আমদানিকারক কিছুটা সুবিধা পেলেও বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে।
'নির্ধারিত সময়ে এলসি মূল্য না পেলে ব্যাংকের নগদ প্রবাহ (ক্যাশ ফ্লো) সংকট হয়। এছাড়া আমদানিকারকদের পেমেন্ট রিস্ক ও রিস্ক প্রিমিয়ামও বেড়ে যায়। পরবর্তীতে এই মূল্য ফেরত দিতে বাড়তি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।'
এফবিসিসিআই হাফিজুর রহমান আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকারখানাকে নীতিসহায়তা প্রদান, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়জনিত ক্ষতি মোকাবিলায় উদ্যোক্তাদের সহায়তা, সময়মতো রপ্তানি বিল পরিশোধ, এসএমই ও কৃষি খাতের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা সম্প্রসারণসহ দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
'আমাদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ ব্যাংক নিবিড়ভাবে কাজ করছে।'
অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতাও চান গভর্নর।
ডেফার্ড এলসির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম অুনযায়ী ঋণের ওভারডিউ পিরিয়ড আগামী এপ্রিল থেকে তিন মাস করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেক্ষত্রে ব্যাংক এ নীতি অনুসরণ করতে গিয়ে সাময়িক কিছুটা খেলাপি ঋণ বাড়লেও ভবিষতের জন্য ভালো।
সভায় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, সাবেক সহসভাপতি আবুল কাশেম হায়দার, সাবেক পরিচালক আব্দুল হক, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এসএম ফজলুল হক, এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মো. আলমগীর, এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদ সদস্য জাকির হোসেন নয়ন ও জাকির হোসেন প্রমুখ।