৪৪ বছরেও ২৯৭ কোটি টাকা ফেরত আনতে পারেনি সোনালী ব্যাংক
স্বাধীনতা পরবর্তী চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় কার্পেট কারখানা সালেহ কার্পেট মিলস লিমিটেড। প্রথম দুই দশক রপ্তানিমুখী গ্রুপটির চারটি কারখানা ভালো ব্যবসা করে। কিন্তু পরবর্তীতে ক্রমাগত লোকসান ও আর্থিক সংকটের ফলে এক সময় বন্ধ হয়ে পড়ে সালেহ কার্পেটের ৪ টি কারখানা। কারখানাগুলোতে বিনিয়োগকৃত টাকা উদ্ধারে ২০০৪ সালে অর্থঋণ মামলা দায়ের করে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। কিন্তু মামলা দায়েরের দীর্ঘ ১৭ বছরেও উদ্ধার হয় নি ব্যাংকটির পাওনা ২৯৭ টাকা।
১৯৭৭ সালে একটি রপ্তানিমুখী পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে গড়ে উঠে সালেহ কার্পেট মিলস লিমিটেড। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ডের ভাটিয়ারি এলাকায় প্রায় ১৩ একর নিজস্ব জমি নিয়ে গড়ে উঠে সালেহ কার্পেটসহ আরো তিনটি প্রতিষ্ঠান। সোনালী ব্যাংকের চলতি মূলধন ঋণ সহায়তায় উৎপাদন শুরু করে কারখানাগুলো। এমনকি ব্যাংকের টাকায় দীর্ঘদিন ভালো ব্যবসাও করে প্রতিষ্ঠানগুলো। পরবর্তীতে ২০০০ সালের পরে লোকসান শুরু হয় কারখানাগুলোতে। এরপর আটকে যায় ব্যাংকের টাকাও।
আদালতের তথ্যমতে, পাওনা আদায়ে ২০০৪ সালে সালেহ কার্পেটসহ চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থঋণ মামলা দায়ের করে সোনালী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- সালেহ কার্পেট মিলস লিমিটেড, সালেহ জরিনা লিমিটেড, সালেহ জুট মিলস লিমিটেড ও জরিনা কার্পেট লিমিটেড। এরপর ২০০৭ থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠান চারটির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় হয়।
অর্থঋণ আদালতে রায়ের পর বর্তমানে চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জারি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় বন্ধকি সম্পত্তিতে রিসিভার নিয়োগ দিতে আবেদন করেছে সোনালী ব্যাংক। বাকি তিনটিতেও রিসিভার নিয়োগের আবেদনের চেষ্টা করছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
প্রতিষ্ঠান চারটির মধ্যে বর্তমানে জরিনা কার্পেট লিমিটেডের কাছে ১০৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা, সালেহ কার্পেট মিলস লিমিটেডের কাছে ৯৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, সালেহ জুট মিলস লিমিটেডের কাছে ৬২ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং সালেহ জরিনা লিমিটেডের কাছে ২৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে সোনালী ব্যাংকের।
সোনালী ব্যাংকের মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী আবুল হাসান শাহাবুদ্দিন বলেন, "সোনালী ব্যাংকের দায়ের করা চারটি অর্থঋণ মামলার রায়ের পর বর্তমানে চারটি জারি মামলা চলমান। অর্থঋণ মামলা দায়েরের দীর্ঘ ১৭ বছর পার হলেও এখনো মামলা চারটি জারি মামলায় রয়েছে। আমরা প্রতিষ্ঠান চারটির সম্পত্তি হতে প্রাপ্ত আয় আদায় করতে বন্ধকি সম্পত্তিতে রিসিভার নিয়োগের আবেদন করছি।"
তিনি আরো বলেন, "এর আগে ২০০৮ সালে সালেহ কার্পেটের সম্পত্তি বিক্রি করতে ইস্ট-ওয়েস্ট কন্টেইনার লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিনামা দলিল হয়। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকের মোট পাওনা ১৮২ কোটি টাকা পরিশোধ না করায় কারখানাটি তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।"
সালেহ কার্পেট'র মালিকানায় রয়েছে চট্টগ্রামের পটিয়ার সালেহ আহমদ চৌধুরীর ওয়ারিশগণ। এরমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী ইতোমধ্যে মারা গেছেন। পরিচালক হিসেবে রয়েছে রবিউল করিম চৌধুরী, জাহানারা বেগম, বদরুল হক, দিলারা বেগম, রওশন আরা বেগম, শামীম আরা বেগম, ফেরদৌসি বেগম, সালেহীন নেওয়াজ চৌধুরী, সালেহীন মেহরাব চৌধুরী এবং জেরিন সালেহ মুলতাজিন চৌধুরী।
এদিকে দেউলিয়া হয়ে পড়া সালেহ কার্পেট প্রতিষ্ঠানটির কাছে সোনালী ব্যাংক ছাড়া অগ্রণী, জনতা ও বিডিবিএল'র ১০০ কোটি টাকার বেশি খেলাপি রয়েছে বলে জানা গেছে।
সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো মনির হোসেন বলেন, "অনেক বছর আগের ঋণ এটি। মামলা দায়েরের পরও অনেক বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো বিষয়টির কোন সুরাহা হয়নি।"
"এরমধ্যে ইস্ট-ওয়েস্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান সালেহ কার্পেটের বন্ধকি সম্পত্তি ক্রয় করতে ব্যাংকে কিছু টাকা পরিশোধও করে। ফলে বিষয়টি নিয়ে এখন ত্রিমুখী ঝামেলা চলছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি ঋণ গ্রহীতা ও সম্পত্তি ক্রেতা উভয়পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করতে," যোগ করেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সালেহ কার্পেট মিলস লিমিটেড এর বর্তমান সমন্বয়ক মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, "এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আপনারা যা জানতে চান ব্যাংক থেকে জেনে নেন।"