আরেক পঞ্জি স্কিম সেবা আইডিয়াসের বিরুদ্ধে ১৬ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ
সেবা আইডিয়াস এন্ড লিভিং লিমিটেড পরিচয়ে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার ব্যানারে অনুমোদনহীন মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা চালিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫৭ কোটি টাকা হাতিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ৪ কর্মকর্তা। এর মধ্যে ১৬ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
তারা হলেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আশিক ঘোষ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. নুরুল ইসলাম, ম্যানেজিং ডিরেক্টর আয়শা আক্তার, ফাইন্যন্স ডিরেক্টর শাহনেওয়াজ শামীম।
সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ অর্থ পাচারের বিষয়টি উঠে এসেছে।
প্রতিষ্ঠানটি রাজউক বা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অনোমোদন না নিয়ে শুধু ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবসা করেছে বলে জানিয়েছে সিআইডি। এছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল ইসলাম ইউনিপেটুইউসহ বিভিন্ন এমএলএমে যুক্ত রয়েছেন। তিনি মূলত গণস্বাস্থ্য ইনিস্টিটিউটের ল্যাবরেটরি এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত। সরকারি চাকরির বিধিমালা লঙ্ঘন করে নুরুল ইসলাম নিজের নামে অবৈধ এসব বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত রয়েছেন।
আবাসন প্রকল্প দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ মানুষদের বছরে দ্বিগুণ লাভের প্রলোভনে ফেলে বিনিয়োগে উৎসাহিত করেছে। এছাড়া নিজেদের কোনো স্থাপনা না থাকলেও স্বয়ার ফিট হিসেবে ফ্ল্যাট বিক্রি করেছে। এসবে কেউ এককালীন বিনিয়োগ করতে না পারলে শেয়ারে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রতি লাখে ৮ হাজার ৪৫০ টাকা লাভ, এক বছরের মধ্যে মূল টাকা দ্বিগুণ এবং দুই বছরের মধ্যে মূল টাকা পাওয়ার প্রলোভন দেখানো হতো ভোক্তভোগী গ্রাহকদের।
এসব প্রতারণার পর চলিত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠনটির ওই চার কর্মকর্তার বিরোদ্ধে ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানায় প্রতারণার মামলা দায়ের হয়। এ মামলার অভিযোগপত্র এবং সিআইডির অনুসন্ধানে উঠে আসে অভিযুক্তরা প্রতারণার মাধ্যমে প্লট রেজিস্ট্রেশন করে দেয়ার নামে প্রায় ২ হাজারের অধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা হাতিয়েছে। এরপর প্রতারণার অভিযোগে দায়ের হওয়া ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ২৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকার হিসাব জব্দ করেছেন।
সিআইডির ফাইন্যন্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট অভিযুক্ত ব্যাক্তিদের ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করেছে। এতে দেখা য়ায়, অভিযুক্ত ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবগুলোতে জমা হয়েছে ১১ কোটি ৭ লাখ ৬২ হাজার ৮৬ টাকা, উত্তোলন হয়েছে ১০ কোটি ৯৫ লাখ ৮৩ হাজার ৪০ টাকা এবং স্থিতি রয়েছে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬ টাকা। এছাড়াও নগদ লেনদেন হয়েছে প্রায় ২৮ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
তাদের কাছে গ্রাহকদের থেকে নেওয়া প্রায় ৩৯ কোটি ৫৫ লাখ ২২ হাজার টাকার হিসাব চায় সিআইডি। জবাবে অভিযুক্তরা জানায়, তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে ৪২ কাঠা জমি কিনেছে যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া টাকা লাভসহ ফেরতে দিয়েছে ২২ কোটি টাকা। তবে বাকি ১৬ কোটি টাকার কোন হিসাব দেখাতে পারেনি। এ হিসাব চেয়ে তাদের সিআইডি কার্যালয়ে ডাকলেও তারা আসেনি।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। সহকর্মী ইব্রাহিম হোসেনের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানে বিষয়ে জানতে পারেন। এরপর তিনি বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান।
তিনি বলেন, "আমি প্রথমে ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। অল্প সময়ে অধিক লাভের প্রলোভনে পরে আত্মীয় ও পরিচিতজনের মাধ্যমে আরও টাকা সংগ্রহ করে মোট ৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। বিভিন্ন সময়ে মোট ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা লাভের অংশ হিসেবে ফেরত পাই। বাকি টাকা ফেরত পাব কিনা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।"
একইভাবে অস্বাভাবিক লভ্যাংশের প্রলোভন দেখিয়ে আসাদুজ্জামানকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করেন তার পরিচিতজন। ভুক্তভোগী আসাদুজ্জামান টিবিএসকে বলেন, "আমাকে তাদের উত্তরার অফিসে নিয়ে তাদের দ্রুত অধিক লাভের নানা পরিকল্পনা দেন। এরপর তাদেরকে বিশ্বাস করে আমি বিভিন্ন সময় মোট ১০ লাখ টাকা দেই। এরপর এখান থেকে ৪ লাখ টাকা পেলেও বাকি ৬ লাখ টাকা পাইনি এখনো।"
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এ প্রতারণার ঘটনায় ১৬ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন এ মামলার তদন্তের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।"