মহামারিকালে বর্জ্যশ্রমিকদের মধ্যে চরম দারিদ্র্য বেড়েছে
গবেষণা বলছে, করোনা মহামারির সময় বর্জ্য সংগ্রহকারী ও স্যানিটেশন কর্মীদের মধ্যে চরম দারিদ্র্য মহামারির আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। মহামারি আগে তাদের মধ্যে চরম দারিদ্র্য ছিল ১৪ শতাংশ। মহামারিকালে এ চরম দারিদ্র্য ৫৬ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ৭০ শতাংশ হয়েছে।
গবেষণায় আরও বলা হয় করোনা মহামারি সব ধরনের কর্মীদের আয়ে প্রভাব ফেলেছে। এ সময় গড়ে প্রতি পরিবারের আয় কমেছে ৪১ শতাংশ। এছাড়াও মহামারি চলাকালীন প্রতি তিনটি পরিবারের একজন সদস্য বেকার হয়ে পড়েছেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।
ব্র্যাক ও কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন বর্জ্য শ্রমিকদের সুস্থতা বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা।
সেন্টার ফর ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেনিং নেটওয়ার্ক—বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অভ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (আইটিএন-বুয়েট)-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক অধ্যাপক আলাউদ্দিন আহমেদ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।
সারা দেশে ১০টি সিটি কর্পোরেশনের ৫০০ পরিবারের ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়।
অধ্যাপক আলাউদ্দিন বলেন, কোভিডের আগে ৭৫ শতাংশ পরিবার তিনবেলা পর্যাপ্ত খাবার খেতে পারত, মহামারির সময় এ পরিমাণ ২১ শতাংশে নেমে আসে। আগে তিনবার ২৫ শতাংশ পরিবার তিনবেলা অপর্যাপ্ত খাবার পেলেও এখন এই পরিমাণ বেড়ে ৪৬ শতাংশ হয়েছে। এখন মাত্র ৩৩ শতাংশ বর্জ্য সংগ্রহকারী এবং স্যানিটেশন কর্মী দুই বেলা খাবার খায়।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৪৬ শতাংশ নারী বর্জ্যকর্মী কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা এবং/অথবা অনিরাপদ বোধ করার কথা জানিয়েছেন। ৪৩ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, তারা নিয়মিত মজুরি পান, অথবা কম পান কিংবা বকেয়া থাকে। প্রায় ৩৮ শতাংশ নারী বর্জ্যকর্মী গার্হস্থ্য সহিংসতার শিকার হন। ৩৭ শতাংশ নারী কর্মীকে ঘরের কাজে পরিবারের অন্য কোনো সদস্য সাহায্য করে না। আর ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ নারী বর্জ্যকর্মী ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে সমস্যায় পড়েন। তাদের মধ্যে প্রায় ১৬ শতাংশ কর্মী মাসিকের স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনার সমস্যায় ভোগেন।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, প্রায় ৫৯ শতাংশ শ্রমিক সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
কোভিডকালে প্রায় অর্ধেক বর্জ্যকর্মী (৪৮%) ও তাদের পরিবারের সদস্যদের (৪২%) করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ায় ঝুঁকি আরও বেড়েছে। কাজের জন্য তাদেরকে বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয় এবং উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করতে হয়। এতে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা বাড়ে।
সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, এই সম্প্রদায়কে নানা কারণে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা চ্যালেঞ্জিং। অন্যতম কয়েকটি কারণ হলো: এ সম্প্রদায়ের আকার, স্বল্প আয় এবং আয়ের অনিশ্চয়তা, মাদকাসক্তি এবং নিজেদের আনুষ্ঠানিক সংগঠনের অভাব।
প্রায় ৪ লাখ বর্জ্য সংগ্রহকারী ঢাকায় প্রতিদিন ৪৭৫ টন বর্জ্য রিসাইকেলে অবদান রাখে (উৎপাদিত বর্জ্যের ১৫%)। অধিকাংশ শ্রমিকের বয়স ২৬ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। নারীরা বেশিরভাগ রাস্তা ঝাড়ু দেওয়ার কাজে নিয়োজিত।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন যে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা একেবারেই প্রান্তিক শ্রেণির এবং সামাজিকভাবে একঘরে। তাদের জীবন ও জীবিকার উন্নয়ন করতে যৌথ প্রচেষ্টা অপরিহার্য। উপার্জন, জীবনযাত্রার অবস্থা, মৌলিক চাহিদাপ্রাপ্তি, সামাজিক অবস্থান, নিরাপত্তা, সংগঠন ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মতো সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আরও বেশি এবং দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ প্রয়োজন।