যুদ্ধের কারণে পশুখাদ্যের দাম বাড়ায় অসহায় ডেইরি খামারিরা
চট্টগ্রামের ডেইরি ফার্ম মালিক জসিম উদ্দিন দৈনিক ১০০ লিটারের বেশি দুধ বিক্রি করেন। আগে মোটামুটি লাভ করতেন, কিন্তু গত ১৫ দিনে পশুখাদ্যের দাম তীব্রভাবে বেড়ে যাওয়ায়, বিপুল লোকসানের শিকার হচ্ছেন তিনি ।
গেল মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "উৎপাদন খরচের চেয়েও দুধের বিক্রয়মূল্য কম হওয়ায়, এখন আমার খামার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।"
পশুখাদ্য (ফিড) ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মাসে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই গবাদিপশুর খাদ্য প্রস্তুতে দরকারি কাঁচামালের চালান আসা বন্ধ রয়েছে।
পশুখাদ্য প্রস্তুতের মূল দুটি উপাদান- ভূট্টা ও সয়াবিন মিল প্রধানত রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকেই আমদানি করা হয়। তাদের মধ্যে যুদ্ধের কারণে- আন্তর্জাতিক বাজারেও কাঁচামাল দুটির দাম চড়েছে, একইসাথে বেড়েছে জাহাজে মালবহনের ভাড়া। এসব কিছুর প্রভাবে স্থানীয় বাজারেও দাম বেড়েছে।
খামারিরা অবশ্য এসব সাফাইকে 'অযৌক্তিক' দাবি করে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।
চট্টগ্রাম ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর বাবু টিবিএসকে বলেন, "পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন খামারিরা। এভাবে চলতে থাকলে, লোকসানের শিকার অনেক খামারিকে তাদের খামার বন্ধ করে দিতে হবে।"
চট্টগ্রাম নগরের ইউনি এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী গত ২ বছর ধরে গরুর খামার পরিচালনা করছেন।
তিনি বলেন, "মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে ৫০ কেজি ওজনের বস্তা প্রতি গোখাদ্যের দাম বেড়েছে ১৫০-২০০ টাকা। মহামারির প্রাদুর্ভাব চলাকালে এক বছরের বেশি সময় ধরে লোকসানের মধ্যে ছিল এই খামার। কোরবানির পর থেকে ভালো ব্যবসা করছিলাম। কিন্তু পশুখাদ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে।"
চাক্তাইয়ের পশুখাদ্যের পাইকারি বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, "মিল পর্যায় থেকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির অযুহাতে- দাম বাড়ানোর ফলে পাইকারি পর্যায়েও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।"
এগ্রোটেক পোলট্রি অ্যান্ড অ্যানিমেল ফুডের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মো. শাহজালাল বলেন, "এক বছর আগেও প্রতি টন পণ্যের শিপিং চার্জ (জাহাজ ভাড়া) ছিল মাত্র ৫০০ ডলার। বর্তমানে তা তিনগুণ বেড়েছে। এতে আমদানি মূল্যের চেয়ে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশের পশুখাদ্য বাজারে প্রভাব পড়েছে।"
দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাক্তাই- খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গেল কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি ১,৪০০ টাকার ভুসি এখন ৫০ কেজির প্রতিবস্তা ১,৫৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ডালের ভুসির দাম ১৪০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৪৪০ টাকা, ছোলার ভুসি ২০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৬০০ টাকা, ভুট্টাগুড়া ১৩৫ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৬৭৫, খৈল ১৫০ টাকা বেড়ে ২, ৪৮০, গম গুড়া ৫০ টাকা বেড়ে ১,৫৫০, লবণ ২০০ টাকা বেড়ে ১,০০০, গুড় ২৫০ টাকা বেড়ে ১,০৫০, সয়াবিন ৫০০ টাকা বেড়ে ২,৮০০, ডিসিপি ফিড ৫০ টাকা বেড়ে ৬৫০ এবং ডিবি প্লাস ফিড ২৫০ টাকা বেড়ে ৩,২৫০ টাকায় পৌঁছেছে ৫০ কেজির প্রতিবস্তার দামে।