ভ্যাট কমলেও সুবিধা পাচ্ছে না ভোজ্যতেলের আমদানিকারকরা
ভোজ্যতেলের বাজারে আস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ, ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ এবং আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ ভ্যাট কমালেও সুবিধা পাচ্ছে না অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী আমদানি করা যেসব ভোজ্যতেলের চালান খালাস করা হচ্ছে সেগুলোতে আগের ভ্যাট কাঠামো অনুযায়ী শুল্কায়ন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা টিবিএসকে বলেন, 'দুই-আড়াই বছর আগের এলসির (লেটার অব ক্রেডিট) পণ্যগুলো এখন খালাস হচ্ছে। যখন এলসি করা ছিল তখন যে ভ্যাটের কাঠামো ছিল, এখন তার চেয়ে কম। কিন্তু এনবিআর আগের ভ্যাটের কাঠামো অনুযায়ীই শুল্কায়ন করছে। এতে করে ভোজ্যতেলের উৎপাদন খরচটা কমানো যাচ্ছে না।'
প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ভোজ্যতেল আমদানি, উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ের তিনটি ধাপে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণে ভ্যাট কমিয়ে আলাদা এসআরও (স্ট্যাটিউটরি রেগুলেটরি অর্ডার) জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এসআরও তিনটি জারি করা হয়েছে ১৪ ও ১৬ মার্চ। কিন্তু এখন যেসব পণ্য খালাস করা হচ্ছে সেগুলো এসব এসআরও জারি করার আগেই এলসি করা ছিল।
এলসি করার সময় প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানির উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট এনবিআরকে প্রদান করেছে। কিন্তু যখন ভ্যাট কমিয়ে এনবিআর এসআরও জারি করে তখন পণ্য খালাসের সময়ও ভ্যাট কমানোর সুবিধা পাওয়ার কথা। অর্থাৎ আমদানি পর্যায়ে যে ১০ শতাংশ ভ্যাট কমানো হয়েছে সেই টাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর ফেরত পাওয়ার কথা। কিন্তু এনবিআর সেটা দিচ্ছে না।
এনবিআরের যুক্তি, যখন এলসি করা হয়েছে তথন যে হারে ভ্যাট ছিল সেই হারেই টাকা দিতে হবে আমদানিকারকদের।
বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি প্রদান করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আবার এ বিষয়টি সমাধানে কাজ করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনকে। ট্যারিফ কমিশন সম্প্রতি এনবিআরকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দেয়।
চিঠিতে ভোজ্যতেলের মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে সয়াবিন ও পাম ওয়েলের আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিয়ে খালাসের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে যারা আগে আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়েছে তাদেরকে প্রদেয় ভ্যাটের ১০ শতাংশ ফেরত দেওয়ার বিষয়েও দ্রুত নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, নতুন এলসির পণ্য এখনই দেশে আসবে না। আরও হয়তো এক-দেড় মাস সময় লাগবে। কিন্তু আগের যেসব পণ্য খালাস হচ্ছে সেগুলো ভ্যাট কমিয়ে যে এসআরও জারি করা হয়েছে সে অনুযায়ীই খালাস হবে এবং বাড়তি যেসব ভ্যাট দেওয়া আছে তা এনবিআর ফেরত দিবে। কিন্তু এভাবে তাদের টাকা যদি ফেরত না দেয় তাহলে তো উৎপাদন খরচ কম রাখার সুযোগ থাকবে না।
সয়াবিন তেলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'আইন অনুযায়ী আমরা আমদানির উপর যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়েছি, পণ্য খালাসের সময় আমরা অবশ্যই সেখান থেকে ১০ শতাংশ টাকা ফেরত পাবো। কারণ পণ্য খালাসের আগেই সরকার এসআরও জারি করেছে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রদানের। এই সুবিধা আমরা না পেলে বাজারে কম দামের সয়াবিন তেল দেওয়া সম্ভব হবে না। সরকার বাজার স্থিতিশীল করতে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা ভেস্তে যাবে।'
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ভোজ্যতেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন তেলের প্রতি লিটারে ১২ টাকা দাম বৃদ্ধির অনুমতি চায়। কিন্তু সরকার দাম বৃদ্ধির অনুমতি না দিলে রিফাইনারি ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়। ১৬৮ টাকার তেল ১৮০-১৯০ টাকায় উঠে যায়। সরবরাহ একেবারে কমিয়ে আনার কারণে খুচরা বাজার তেলশূন্য হয়ে পড়ে এবং ভোক্তারা বিপাকে পড়ে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ, উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয় সরকার।
এরপর সরকার আরেক দফা সয়াবিন ও পাম ওয়েলের দাম কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু সরকারের নতুন এই দাম এখনও সারাদেশে কার্যকরী হয়নি। নতুন দাম অনুযায়ী সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৩৬ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৭৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আরেক দফায় পাম ওয়েলের দাম কমিয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
তবে শনিবারের ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৫৫-১৬০ টাকা, এক লিটারের বোতল ১৬০-১৬৫ টাকা এবং পাম ওয়েল ১৪৫ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
শুধুমাত্র ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৭৪০-৭৬০ টাকার মধ্যে।