কর অব্যাহতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে এনবিআর
সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন খাতে কর অব্যাহতি (আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক) ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে অব্যাহতির পরিবর্তে শুল্ক-কর হিসাব করে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি।
এ অনুরোধ জানিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ ২৮১টি প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে এনবিআর। ওই চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে শুল্ক-কর অব্যাহতি দেশের জিডিপিতে করের অবদান বাড়ানোর (ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও) ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। অব্যাহতির বদলে এসব কর আদায় করা গেলে দেশের ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ হবে বলেও মনে করছে সংস্থাটি।
এনবিআরের হিসাবে, প্রতি বছর বিভিন্ন খাতে যে অব্যাহতি দেওয়া হয়, তার পরিমাণ প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরাও ঢালাও কর অব্যাহতির বিপক্ষে। অর্থনীতিবিদ ও গণনীতি বিশ্লেষক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এনবিআরের এমন অবস্থানের সঙ্গে আমি একমত। কর আদায়, আর্থিক স্বচ্ছতা এবং আন্তঃখাত বৈষম্য কমানোর স্বার্থে ঢালাও অব্যাহতির সুবিধা বাতিল হওয়া উচিত। এসব অর্থ সরকারের কোষাগারে দেওয়ার পর প্রয়োজনে ব্যয় দেখিয়ে তারা তা বরাদ্দ নিতে পারে।'
তিনি মনে করেন, এই সুবিধা অন্যান্য প্রকল্প ও অনেক গোষ্ঠী নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, 'তবে এই সুবিধা যে একেবারেই দেওয়া যাবে না, তা নয়। কিন্তু তা হতে হবে বিশেষ প্রয়োজনের নিরিখে এবং খুবই কম।'
অর্থমন্ত্রীও এ ধরণের অব্যাহতি দেওয়ার পক্ষে নন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, 'বিভিন্ন খাতে কর অব্যাহতি যতটা সম্ভব পরিহার করা হবে। অস্বাভাবিক কোন কারণ ছাড়া ঘন ঘন প্রজ্ঞাপন (এসআরও) জারি করা আমরা পরিহার করবো। এর ফলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসবে। সরকারের প্রতি ব্যবসায়ীদের আস্থাও বাড়বে।'
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিমও একাধিক আলোচনায় ঢালাও অব্যাহতির বিপক্ষে তার অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নকালে এনবিআর অব্যাহতির বিষয়ে একটি ইন্টারনাল স্টাডি পরিচালনা করে।
এনবিআর অনুমান করছে যে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ট্যাক্স- জিডিপি রেশিও ছিল ৯.৯%, কিন্তু সরকার কর অব্যাহতি না দিলে তা হতো ১৭.৮১%।
সেখানে বলা হয়, সরকার সে অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে প্রবৃদ্ধির সুবিধার্থে প্রায় ২.৫ লাখ কোটি টাকার কর অব্যাহতি দিয়েছে। ৩ লাখ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ওই বছর ২.১৮ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয় তখন।
মোট অব্যাহতির মধ্যে কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য পণ্য আমদানির জন্য ৪৬,৭৫৫ কোটি টাকা অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল; এছাড়াও রপ্তানিমুখী শিল্পের বন্ড সুবিধার জন্য ১,৫১,৭৩৮ কোটি টাকা মওকুফ করা হয়েছিল।
গত বছরের ৩ জুন সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করার আগে এসব তথ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল।