কাঁচামাল সরবরাহের ওপর উৎস কর কমিয়ে ৪% করবে সরকার
অর্থমন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, উৎপাদন খরচ কমানোর লক্ষ্যে সরকার উৎপাদকদের কাঁচামাল সরবরাহের ওপর উৎস কর ৭% থেকে কমিয়ে ৪% করতে চলেছে।
এছাড়া, ব্যবসায়িক পণ্যের সরবরাহের ওপর উৎস করের হার ৭% থেকে কমিয়ে ৫% এবং সরকারি বই ছাড়া অন্য বই সরবরাহের ওপর ৭% থেকে কমিয়ে ৩% করা হবে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, একেক ধরনের সরবরাহের উৎসে একেক ধরনের করহার কিছুক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। তাই এটি কমানো হচ্ছে। কারণ সরকার ব্যবসা পরিচালনা সহজ করাসহ ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে চায়।
এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কাঁচামাল সংগ্রহের সময় উৎসে কর কমানোর দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। এটি পূরণ হলে- আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা আরও বাড়বে, যা আমাদের স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণ পরবর্তীকালের চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলায় সাহায্য করবে।"
এদিকে কর আইনের আওতায় কোম্পানি হিসেবে সংজ্ঞায়িত সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন জমা দেওয়া বাধ্যতামুলক করা হবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে।
আয়কর অধ্যাদেশ অনুসারে, যেকোনো জাতীয়করণকৃত ব্যাংকিং বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা সংস্থা এবং শিল্প বা ব্যবসায়িক উদ্যোগকে কোম্পানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আগামী অর্থবছর থেকে ব্যবসা নিয়ন্ত্রক, কর্তৃপক্ষ এবং কর্পোরেশনকেও নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
বর্তমানে যেসকল ব্যবসা জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অ্যান্ড ফার্মের রেজিস্ট্রারের কাছে নিবন্ধিত তাদের কোম্পানি হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তাদের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবৃতি জমা দিতে হয়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকার কোম্পানি এবং নিরীক্ষক উভয়কেই ট্যাক্স কমপ্লায়েন্সের আওতায় আনতে এবং জাল আর্থিক বিবৃতি জমা দেওয়া বন্ধ করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, একটি বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের একজন প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা বলেন, ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির জন্যও নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হলে তাতে তাদের খরচ বাড়বে।
এর মধ্যেই, শ্রমিকদের লাভের অংশগ্রহণ তহবিলে (ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড) দেওয়া কোম্পানির অর্থও করের আওতায় আসছে। বর্তমানে, এটি একটি ব্যয় হিসাবে বিবেচিত এবং কর থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত।
শ্রম আইন মেনে এ ধরনের তহবিলের ওপর কর আরোপের জন্য সরকার এই উদ্যোগ নিচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, একটি কোম্পানি তার বার্ষিক লাভের একটি অংশ এ তহবিলে দিলে তা করের আওতায় আনা হচ্ছে।
আবুল কাশেম বলেন, ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডে কর আরোপ করলে ব্যবসায়িক খরচ বাড়বে।
নতুন বাজেটে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রসারের জন্য অনাবাসী ব্যান্ডউইথ পেমেন্টের উপর উৎস করের হার ২০% থেকে কমিয়ে ১০% করার প্রস্তাব করা হতে পারে।
এছাড়া, অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে বিল পরিশোধকে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিদেশি সংস্থাগুলিতে অন্যান্য পরিষেবা প্রদান থেকে উৎস কর আদায়ের হার ৩০% থেকে কমিয়ে ২০% করা হবে।