বিনিয়োগে কর রেয়াত: কম আয়ের করদাতাদের ওপর নতুন বোঝা
শেয়ার বাজার, সঞ্চয়পত্র এবং বিনিয়োগের অন্যান্য মাধ্যমে বিনিয়োগের কর রেয়াতের (ট্যাক্স রিবেট) প্রস্তাবে কম আয়ের করদাতাদের রেয়াত কমতে যাচ্ছে, এর ফলে তাদের বাড়তি কর দিতে হবে। অন্যদিকে, আরও বেশি কর সুবিধা পাবে বেশি আয়ের করদাতারা।
অন্যকথায়, বিনিয়োগের সীমা কমানোর কম আয়ের করদাতাদের আরও বেশি কর দিতে হবে। এছাড়া, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল না করলে রেয়াত আরও অর্ধেক কমে যাবে।
বর্তমানে একজন করদাতা মোট করযোগ্য আয়ের মধ্যে ২৫% বিনিয়োগের ওপর ট্যাক্স রিবেট পান। এর মধ্যে যাদের আয় ১৫ লাখের বেশি, তারা মোট ট্যাক্স এর রিবেট পান ১০% আর যাদের ১৫ লাখের কম, তারা পান ১৫%।
নতুন প্রস্তাবে যে কোন পরিমাণ আয়ের করদতাদের জন্য এই রিবেট ১৫% করা হয়েছে। আবার মোট আয়ের বিনিয়োগের সীমা ২৫% থেকে কমিয়ে ২০% করা হয়েছে।
ধরা যাক, একজন করদাতার বছরে করযোগ্য আয় ৬ লাখ টাকা। বর্তমান বিধান অনুযায়ী, এর উপর ২৫% বা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ অনুমোদন হবে, যার উপর তিনি রিবেট পাবেন ১৫%। সে হিসেবে তার রিবেট বা ট্যাক্স ক্রেডিটের পরিমাণ দাঁড়াবে ২২,৫০০ টাকা। অন্যদিকে তার করযোগ্য আয়ের উপর গ্রাস ট্যাক্সের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৫,০০০ টাকা (ছয় লাখের মধ্যে প্রথম তিন লাখ টাকা করমুক্ত, পরবর্তী এক লাখের উপর ৫% হিসেবে ৫ হাজার টাকা ও পরবর্তী দুই লাখের উপর 1১০% হিসেবে ২০ হাজার টাকা)। এখান থেকে তার ট্যাক্স ক্রেডিট ২২,৫০০ টাকা বাদ দিলে প্রদেয় করের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৫০০টাকা, যা তিনি সরকারের এক্সচেকারে জমা দেবেন।
এবার আসা যাক নতুন প্রস্তাবে। নতুন নিয়মে ৬ লাখ টাকার ওপর সরকার তার বিনিয়োগ অনুমোদন করবে ২০% বা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা অনুমোদন হবে, যার উপর ১৫% রিবেট হিসেবে ট্যাক্স ক্রেডিট হবে ১৮ হাজার টাকা। তার গ্রস ট্যাক্স লায়াবিলিটি যথারীতি ২৫,০০০ টাকা। এখান থেকে তার ট্যাক্স ক্রেডিট বা প্রাপ্য রিবেট ১৮ হাজার টাকা বাদ দিলে তার প্রদেয় করের পরিমাণ দাঁড়াবে ৭ হাজার টাকা।
অর্থাৎ একই আয়ের উপর বিনিয়োগের রিবেট নেওয়ার পর এতদিন যার ট্যাক্স পরিশোধ করতে হতো আড়াই হাজার টাকা এখন, তাকে সাড়ে চার হাজার টাকা বেশি দিতে হবে।
এর মধ্যে আবার কেউ যথাসময়ে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে তার ওই রিবেট অর্ধেক কমে যাবে, অর্থাৎ ট্যাক্সের পরিমাণ আরো অনেক বেড়ে যাবে।
অথচ কারো যদি বছরে ২০ লাখ টাকা আয় হয়, বিদ্যমান নিয়মে তার কর হতো ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আর নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, তার ট্যাক্স হবে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
করদাতা এবং অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বল্প আয়ের করদাতাদের যেখানে স্বস্তি দেওয়ার জন্য করের বোঝা কমানো উচিত ছিলো, তা না করে তাদের উপর করের বোঝা বাড়ানো হচ্ছে। অথচ একই সময়ে ধনী শ্রেণির করদাতাদের বিনিয়োগের রিবেট এ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান মনে করেন, এমন প্রস্তাব সমর্থনযোগ্য নয়।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "এর ফলে ধনী শ্রেণির করদাতারা সুবিধা পাবে আর অপেক্ষাকৃত কম আয়ের করদাতাদের ওপর করের বোঝা বসবে। অথচ বর্তমান মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিতে তাদের স্বস্তি দেওয়ার জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো দরকার ছিলো। কিন্তু নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, রিলিফ তো নয়ই, উল্টো তাদের উপর করের চাপ বাড়ল।"
দেশে বর্তমানে ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারী (ই-টিআইএন) ৭৫ লাখের বেশি, যাদের মধ্যে সর্বশেষ বছরে প্রায় ২৫লাখ টিআইএনধারী টাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) বিনিয়োগের উপর কর রেয়াত নেওয়া কম আয়ের মোট করদাতার সংখ্যা এবং করদাতার মোট সংখ্যার কোনো তথ্য নেই। এনবিআরের একটি সূত্র অবশ্য দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, প্রায় সব বেতনভোগী ব্যক্তি বিনিয়োগের মাধ্যমে কর রেয়াত উপভোগ করছেন।