বিপজ্জনক পণ্য বন্দরে আসার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খালাসের নির্দেশ আমদানিকারকদের
আমদানিকৃত সব বিপজ্জনক পণ্য বন্দরে অবতরণের পর ৭২ ঘন্টার মধ্যে খালাস করতে আমদানিকারকদের নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বিপজ্জনক পণ্যের জন্য উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন পৃথক শেড নির্মাণ এবং সমস্ত ডিজি কারগো ইয়ার্ডকে ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি নজরদারির আওতায় আনাসহ ১৭টি সুপারিশ করেছে।
সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডসহ বিপজ্জনক পণ্য আমদানি রপ্তানিতে চলমান সংকট নিরসনে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ১৩ জুন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সব ব্যবসায়ী সংগঠনসহ স্টেক হোল্ডার প্রতিনিধিদের সাথে বন্দর ভবনে একটি বৈঠক করে। ডিজি কারগো পরিবহনে আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফ এজেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের এসব নির্দেশনা দিয়েছে বন্দর কতৃপক্ষ।
সব শিপিং এজেন্টদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে ১৬ জুন একটি চিঠি দিয়েছে বিএসএএ। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ডিজি কারগো আমদানি রপ্তানি স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যমান সব নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে শিপিং এজেন্টদের অনুরোধ জানোনো হয়েছে।
বিএসএএ'র চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ টিবিএসকে বলেন, ছোট বড় মিলিয়ে বিএসএএ'র সদস্য শিপিং এজেন্ট রয়েছে ৫০০ টি। বিপজ্জনক পণ্য আমদানি রপ্তানি স্বাভাবিক রাখতে শিপিং এজেন্টরা যাতে সকল দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি সতর্কতার সাথে মেনে চলে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ডিজি কারগো আমদানি রপ্তানি, সংরক্ষণ এবং পরিবহনের জন্য আমদানিকারক রপ্তানিকারকসহ স্টেক হোল্ডারদের দেওয়া বন্দরের ১৭টি সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, আমদানিকৃত সব বিপজ্জনক পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে অবতরণের পর ৭২ ঘন্টার মধ্যে খালাস করা।
এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ সহ সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্ট ও চেম্বার অব কমার্স গুলো দ্রুত ডেলিভারির জন্য তাদের সদস্য আমদানিকারকদের প্রতিনিয়ত তাগিদ দিতে বলা হয়েছে।
আমদানিকারক কর্তৃক আইএমডিজি কোড বা নীতিমালা যথাযথ প্রতিপালন করে আইজিএমে পণ্যের ঘোষণা দেওয়া। বিপদজনক পণ্য পরিবহনে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস নীতিমালা অনুযায়ী স্ট্যান্ডার্ড প্যাকিং এবং কারগো ও কন্টেইনারে ডিজি স্টিকার ব্যবহার করার সুপারিশ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া, কোন ড্যামেজ কন্টেইনারে ডিজি কারগো পরিবহন না করা, ডিজি কার্গো অবতরণের ২৪ ঘন্টার পূর্বেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে বাংলাদেশ নেভির অনুমতি নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশ নেভি এবং বিস্ফোরক অধিদপ্তরের নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
বন্দরের সুপারিশে আরো উল্লেখ করা হয়, বন্দর সংরক্ষিত এলাকায় দিয়াশলাই, গ্যাস লাইটার, সিগারেট ইত্যাদি নিয়ে প্রবেশ কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করা, ডিজি ইয়ার্ড এবং শেডসমূহে পণ্য ডেলিভারি নিতে আসা সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্মী এবং শ্রমিকদের অবাধ যাতায়ত নিয়ন্ত্রণ করা, ডিজি ইয়ার্ড এবং কেমিক্যাল শেডসহ সকল শেড/সিএফএস এ বন্দর ব্যবহারকারীদের নিয়মিত অংশগ্রহণে ফায়ার ড্রিল এর ব্যবস্থা করতে বলা হয়।
এছাড়া অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে সব ধরনের বিপজ্জনক পণ্য এবং পচনশীল পণ্য প্রথম অকশানেই নিষ্পন্ন করা এবং স্পট নিলাম করা, সাউথ কন্টেইনার ইয়ার্ডে রক্ষিত অকশান কন্টেইনার সমূহ হতে প্রতিদিন ন্যূনতম ৫০ টি কন্টেইনারে পণ্য নিলামে নিষ্পন্ন করা।
হ্যাজার্ডার্স/কেমিক্যাল পণ্য জাহাজ থেকে অবতরণের পর পরই আমদানিকারকরা যাতে ডেলিভারি নিতে পারে সে লক্ষ্যে শুল্ক বিভাগ হতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা, হ্যাজার্ডার্স বা কেমিক্যাল পণ্য এবং পচনশীল পণ্য আমদানি করার পর চট্টগ্রাম বন্দর অথবা ডিপো হতে ডেলিভারি না নিলে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং প্রথম বিডে পণ্য নিলাম নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।