জুনে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ বেড়েছে
বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার গতি কম থাকলেও অর্থবছরের শেষের দিকে এসে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার হার বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত প্রথম ১১ মাসে সরকারের মোট ঋণের পরমাণ ৩২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। আর শেষ মাস জুনের মাত্র ২২ দিনেই ঋণের এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ২৬৫ কোটি টাকায়।
অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সরকারের সঞ্চয়পত্র থেকে মোট ঋণের পরিমাণ ১৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, যা সরকারের লক্ষ্যমাত্রার ৫৬.৭৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার সঞ্চয়পত্রে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। তাই আগামী একমাসে অর্থাৎ, জুনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এ খাত থেকে ঋণ নিতে হবে আরও ১৩ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পে (এডিপি) ব্যয় কম হওয়ায় সরকার এ খাত থেকে ঋণ কম নিয়েছে। তবে সরকারের ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ গ্রহণে ধীর গতি থাকলেও অর্থবছরের শেষে ঋণ আদায় বাড়িয়ে দিয়েছে।
সংশোধিত জাতীয় বাজেটে ২০২২ অর্থবছরের জন্য সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা পুননির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ২৮৮ কোটি টাকায়। ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রাও পুনঃনির্ধারিত হয়েছে ৮৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকায়। এছাড়া, অন্যান্য অভ্যন্তরীণ নন-ব্যাংকিং উৎস থেকে ৩৭ হাজার ১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্পের নেট বিক্রয়ের মাধ্যমে ৩২ হাজার কোটি টাকাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে মোট ঋণ নিয়েছে ৯৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এরমধ্যে আগে এ খাত থেকে ঋণের আসল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধ করেছে ৭৯ হাজার ১৯২ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, "সরকারের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে কম সুদে ঋণ পাচ্ছে, তাই তারা সঞ্চয়পত্র ঋণের চাহিদা কামিয়ে দিয়েছে। এছাড়া উন্নয়ন বাজেটে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় চলতি অর্থবছরে ব্যয় কম হওয়ায় সঞ্চয়পত্র ঋণ কমেছে।"
সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। অথচ চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে পর্যন্ত) এডিপি বাস্তবায়ন করা হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমত্রার ৬৫.৫৬ শতাংশ।
এদিকে, সরকারের ব্যাংকিং খাতে ঋণের পরিমাণ কম থাকলেও অর্থবছরের শেষ দিকে ঋণের চাহিদা বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরের ২২ জুন পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকার নিট ৪৭ হাজার ৯১৭ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। গত মে পর্যন্ত যা ৩২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা ছিল।
এর মানে, মাত্র ২২ দিনের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ১৫ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত রোববার (১২ জুন) ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে সুদহার ছিল ৬.৫৯ শতাংশ। একই দিন ৯১ দিন মেয়াদি বিলে সরকার সুদ দিয়েছে ৬.০৫ শতাংশ। এর আগে গত ১৫ জুন ৫ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার দাঁড়ায় ৭.৮০ শতাংশ।
অথচ গতবছরের জুনে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল মাত্র ০.৫২ শতাংশ। আর ১৮২ দিন মেয়াদি বিলে ছিল ০.৬৮ শতাংশ। এছাড়া ৫ বছর মেয়াদি বিলের সুদহার ছিল ৩.৮৪ শতাংশ। এসব সুদের হার বাড়তি থাকায় ব্যাংকগুলো অধিক পরিমাণে সরকারি ঋণে বিনিয়োগ করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ঋণ নেওয়া অনেক বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে গত ১৪ জুন ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের মোট ঋণ ২ লাখ ৫০ হাজার ৩২ কোটি টাকায় ঠেকেছে।
নতুন অর্থবছর ২০২২-২৩ এর জন্য ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এরমধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ৮৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।