'আইনি লড়াই চালাতে শামীমাকে যুক্তরাজ্যে ফিরতে দেওয়া উচিত'
স্কুল শিক্ষার্থী থাকাকালে লন্ডন ছেড়ে আইএসে যোগ দিতে যাওয়া ২০ বছর বয়সী শামীমা বেগমের যুক্তরাজ্যে ফিরে যাওয়ার অনুমতি মিলল অবশেষে। তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য এই অনুমতি দেওয়া হলো।
দেশটির আপিল আদালত এ বছর স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিল কমিশনের (সিয়াক) পূর্বের রায় আংশিকভাবে বাতিল করে দিয়েছিলেন, যেটিতে বলা হয়েছিল, তিনি সিরিয়ায় থাকাকালীন অবৈধভাবে রাষ্ট্রহীন হননি; কারণ তিনি বংশানুক্রমিকভাবে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের অধিকারী।
আপিল বিভাগের তিন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ডের লর্ড জাস্টিস ফ্লক্স এই সিদ্ধান্তে জানান, 'এক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় জড়িত থাকা সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ, তাকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের অনুমতি দেওয়াই তার আপিল আবেদনের প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায় বিচারের একমাত্র পথ। এই মামলার সকল তথ্যানুসারে ব্যাপারটি জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগকে ছাড়িয়ে যায়।'
অবশ্য যুক্তরাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, 'কোর্টের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত হতাশাজনক। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়ে ততদিন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর না করার আবেদন করেছি।'
২০১৫ সালে ১৫ বছর বয়সে আরও দুই বন্ধুসহ লন্ডনের বেথনাল গ্রিন ছেড়ে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আইএসে যোগ দেন শামীমা। ২০১৯ সালে ৯ মাসের গর্ভবতী অবস্থায় সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে পাওয়া যায় তাকে। যুক্তরাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভেদ তখন শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করেন। বাবা-মা জন্মসূত্রে বাংলাদেশি হওয়ায় তার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ আছে উল্লেখ করে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তটির বিরুদ্ধে আপিল করার পরই এই আইনি লড়াই শুরু।
শামীমা বেগমের আইনজীবী দাবি করেন, সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের একটি ক্যাম্পে থাকার কারণে আইনজীবীদের সঙ্গেও যোগাযোগের অসুবিধার জন্য ভালোভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি শামীমা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাভিদ তার নাগরিকত্ব বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার কিছুদিন পরই শামীমার সন্তান জারাহ মারা যায়। ইতোপূর্বে আইএসে কাজ করাকালীন তার আরও দুটি সন্তান হয়েছিল, তারাও মারা গেছে।
এ বছর ফেব্রুয়ারিতে তাকে সিরিয়ার আল-রোজ নামে একটি শরণার্থী শিবিরে পাওয়া যায়। শামীমা বেগম আইএসের 'আল-হিসবা'র সদস্য থাকাকালে কালাশনিকভ রাইফেল বহন করতেন। আত্মঘাতী বোমারুদের গায়ে সুইসাইড ভেস্ট সংযুক্ত করার কাজে নিয়োজিত থাকার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ কারণে এ ব্যাপারে জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট হুমকি আছে বলে দাবি করছে যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা কার্যক্রমে যুক্ত সংস্থাগুলো।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান