আইসিজের রায়: কী হবে সু চির
রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা বন্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমারকে নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)।
গত মাসে আইসিজেতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে মিয়ানমারের কার্যত নেতা অং সান সু চি তার দেশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করার পরও আদালত এ রায় দিল।
তবে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাখাইনে কোনো গণহত্যা সংঘটিত হয়নি।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, মামলার গুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে আদালত (আইসিজে) মোটের ওপর সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, যেটি মিয়ানমারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
ওই বিবৃতিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনা করে বলা হয়, তারা রাখাইনের ‘বিকৃত চিত্র’ তুলে ধরেছে।
মিয়ানমার সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, মানবাধিকার সংগঠনগুলো কয়েকটি দেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে। একই সঙ্গে সংগঠনগুলো মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশটিতে ‘টেকসই উন্নয়নের’ প্রচেষ্টা ব্যাহত করেছে।
বিবৃতিতে রাখাইনে যুদ্ধাপরাধের কথা স্বীকার করা হলেও গণহত্যার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।
২০১৭ সালে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অভিযানের পর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
জাতিসংঘের তদন্তকারীরা সতর্ক করে বলেছেন, গণহত্যার মতো ঘটনা ফের সংঘটিত হতে পারে।
এমন বাস্তবতায় আফ্রিকার মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া আইসিজেতে মামলা করে পূর্ণ তদন্ত শুরুর আগ পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।
আইসিজে এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বেশ কিছু অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।
রায়ের পর নিজ দেশের পক্ষে সাফাই গাওয়া সু চির সামনে আর কী রইল, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন বিবিসির মিয়ানমার সংবাদদাতা নিক বেক।
তিনি তার বিশ্লেষণে লেখেন, আইসিজের রায় নিঃসন্দেহে অং সান সু চির আন্তর্জাতিক খ্যাতির যতটুকু ছিল, তাও শেষ করে দিয়েছে।
সু চি মিয়ানমারে যুক্তিতর্কে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি সশরীরে উপস্থিত হয়ে আদালতকে বলেছেন, কোনো গণহত্যা, ধর্ষণ বা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি।
মিয়ানমারের কার্যত নেতার সবচেয়ে বড় সমালোচকরাও বলতেন, মিয়ানমারে এখনো ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করেন না সু চি।
তবে মিয়ানমার জেনারেলদের কর্মকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গেয়ে এবং এ কাজে ব্যর্থ হয়ে সু চি তার ও সেনাদের মধ্যকার দেয়াল সরিয়ে দিয়েছেন।
মিয়ানমার এখন পর্যন্ত আইসিজের রায় মেনে চলেছে। তবে দেশটি জরুরি ব্যবস্থাগুলো মানবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বৃহস্পতিবার একটি ব্রিটিশ সংবাদপত্রে লেখা নিবন্ধে সু চি প্রশ্ন করেন, আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থা তার দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘের তদন্তকারীদের বলা 'অসমর্থিত বক্তব্যগুলো' এড়িয়ে যেতে পারে কি না।
এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে যুক্ত হয়ে পরাস্ত অং সান সু চি কি ফের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে কি না, সেটাই প্রশ্ন।