আফগানিস্তান সংকট: অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে জি-২০ নেতাদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি
আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-২০'র সদস্যরা সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল বলেছেন, "দেশটিকে বিশৃঙ্খলার মাঝে ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না"।
এর আগে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে আফগানিস্তানে অর্থপ্রবাহ বজায় রাখার জন্য বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
জাতিসংঘের এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন জি-২০ নেতারা। ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি'র আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে আফগানিস্তানকে সাহায্যের ব্যাপারে তারা একমত হয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জোর দিয়ে বলেন, ক্ষমতাসীন তালেবানদের কাছে সরাসরি সাহায্য না পাঠিয়ে, তা স্বাধীন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে পাঠানো উচিত।
তবে, এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানে প্রেরিত সাহায্য মূলত জরুরি খাবার এবং ওষুধ সরবরাহের জন্যই পাঠানো হয়েছে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন, আফগানিস্তান এবং এর শরণার্থীদের আশ্রয় দানকারী প্রতিবেশী দেশগুলোকে ১ বিলিয়ন পাউন্ড (১.১৫ বিলিয়ন ডলার) সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
গত মাসে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় নতুন সরকার গঠিত হলে জার্মান চ্যান্সেলর মের্কেল, চ্যান্সেলরের পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন; তবে তিনি সরে দাঁড়ানোর আগে জার্মানির পক্ষ থেকে আফগানিস্তানকে ৬০০ মিলিয়ন পাউন্ড সহায়তার প্রতিশ্রুতিকে পুনরায় নিশ্চিত করেছেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "আফগানিস্তানের মুদ্রা ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে বা আর্থিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে আমাদের কারও এখানে লাভের কিছু নেই।"
পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে কঠিন হয়ে উঠছে
তালেবানদের দেশ দখল আফগান অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিয়েছে। বিশৃঙ্খলা ও উত্তেজনার মাঝে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে থাকে দেশটিতে।
তালেবানদের কাবুল দখলের পর অনেক দিন ব্যাংক বন্ধ ছিল; তবে বর্তমানে অনেক ব্যাংক খুলে দেওয়া হলেও নগদ টাকা ওঠানো এখনও বেশ কঠিন।
অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে জীবন ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। আর যারা চাকরি করতেন, তাদের অনেকেই মাসের পর মাস বেতন পাননি।
বাজারে নগদ অর্থের প্রবাহ না থাকায় খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
যেসব নারীরা চাকরি পেয়েছিলেন এবং তাদের পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করে আসছিলেন, তারা এখন আর কাজ করতে পারছেন না। পুরোপুরি গৃহবন্দি হয়ে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন এখন তারা।
কাবুলে শত শত মানুষ এখনও খোলা জায়গায় তাবু টাঙিয়ে বসবাস করছেন। দীর্ঘদিন পশ্চিমাদের, বিশেষ করে মার্কিন সহায়তার উপর নির্ভরশীল আফগানিস্তানের পরিস্থিতি তালেবান দখলের পর থেকে আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
সম্মেলনে জি-২০'র সব নেতারা অংশগ্রহণ করেননি- চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন বলে জানান ইতালির প্রধানমন্ত্রী দ্রাঘি। সেইসঙ্গে তিনি আরও জানান, সমস্ত অংশগ্রহণকারীই আরও সহায়তা প্রদানের বিষয়ে একমত হয়েছেন।
'খাওয়ার কিছু নেই'
আফগানিস্তানে কর্মরত সাহায্যকর্মীরা সামনে আরও গুরুতর মানবিক সংকটের আশঙ্কা করছেন।
বিবিসির কাছে আফগানরা তাদের দুদর্শার কথা ব্যক্ত করেছেন।
অবসরপ্রাপ্ত এক আফগান দেশের খাদ্য সংকট ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি সম্পর্কে বলেন, "কিছুই পাওয়া যায় না; যদিও বা পাওয়া যায়, সেটি হয় খুব ব্যয়বহুল। আমাকে গত বছর টাকা দেওয়া হয়েছিল এবং এখনও আমার বেতনের অপেক্ষায় আছি, ঘরে আমার বাচ্চাদের এবং আমার খাওয়ার কিছু নেই।"
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গত মাসে জেনেভায় একটি দাতা সম্মেলনে সতর্ক করেছিলেন, দেশটিতে দারিদ্র্যের হার বেড়ে চলেছে এবং সরকারি পরিষেবাগুলোও ভেঙে পড়তে শুরু করেছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, আফগানিস্তানের জিডিপি'র প্রায় ৪০ শতাংশই পূরণ হয় বিদেশি সাহায্য থেকে।
১৫ আগস্ট তালেবানের কাবুল দখলের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১০ বিলিয়ন সম্পদ স্থগিত করে রেখেছে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশা দিন দিন চরমে উঠছে।
তবে, এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে দরিদ্রদের খাবারের ব্যবস্থা করাই বিশ্ব নেতাদের কাছে সর্বাধিক অগ্রাধিকার পাচ্ছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
- সূত্র- বিবিসি