আমেরিকার গণতন্ত্র সম্মেলনে ১১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দাওয়াত পায়নি
চলতি বছরের ডিসেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে অনুষ্ঠেয় 'সামিট ফর ডেমোক্রেসি' বা 'গণতন্ত্র সম্মেলনে' আমন্ত্রিতদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বাংলাদেশ।
৯ থেকে ১০ ডিসেম্বর অনলাইনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ওই সম্মেলন থেকে বাদ পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কাও। তবে, তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে অন্য দুই মার্কিন মিত্র ভারত ও পাকিস্তান।
সম্মেলনে রাশিয়া ও চীনকে বাদ দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাইওয়ানকে। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন আচরণ চীন-মার্কিন উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
এদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার আরও দুই রাষ্ট্র মালদ্বীপ ও নেপালকেও রাখা হয়েছে মার্কিন গণতন্ত্র সম্মেলনের তালিকায়। কিন্তু সেই তালিকায় বাংলাদেশের নাম না থাকায়, এর কারণ নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে শুরু হয়েছে আলোচনা।
সুইডেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেকটোরাল অ্যাসিস্ট্যান্স' (ইন্টারন্যাশনাল আইডিইএ)-এর ২০২১ সালের 'বৈশ্বিক গণতন্ত্র পরিস্থিতি' শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শাসনব্যাবস্থাকে 'হাইব্রিড' ও 'কর্তৃত্ববাদী' বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সোমবার স্টকহোম থেকে প্রকাশিত হয় ওই প্রতিবেদন।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে উদ্দেশ্য আইডিইএ বলেছে, কিছু হাইব্রিড ও কর্তৃত্ববাদী দেশে নিয়মিতই অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচন। তবে ওই সব নির্বাচনে প্রতিযোগিতা ও অংশগ্রহণের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নেই। এছাড়া, অহরহ দুর্নীতি ও অনিয়মও ঘটছে এসব নির্বাচনে।
বৈশ্বিক গণতন্ত্র পরিস্থিতির প্রতিবেদনে এমন অবস্থানের কারণে মার্কিন গণতন্ত্র সম্মেলনের তালিকা থেকে বাংলাদেশ বাদ পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হল, এবারের গণতন্ত্র পরিস্থিতি প্রতিবেদনে 'ক্ষয়িষ্ণু গণতান্ত্রিক দেশের' সারিতে যুক্তরাষ্ট্রের নামও উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের 'গণতন্ত্রের আঁতুড়ঘর' খ্যাত সেই যুক্তরাষ্ট্রেই নেই সার্বজনীন ভোটাধিকার। দেশটিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের মতো মৌলক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন লাখ লাখ কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যালঘুরা।
অন্যদিকে, গণতন্ত্র সম্মেলনে ব্রাজিলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাইডেন; যদিও দেশটির চরম ডানপন্থী রাষ্ট্রপতি, জাইর বলসোনারোর 'কর্তৃত্ববাদী' আচরণ নিয়ে প্রায়শই সমালোচনা করে থাকেন বিশ্লেষকরা।
অনলাইন সম্মেলনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে অংশ নেবে কেবল ইসরাইল ও ইরাক। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য আরব মিত্র মিশর, সৌদি আরব, জর্ডান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি সম্মেলনে।
চলতি বছরের আগস্টে সম্মেলন ঘোষণার সময় হোয়াইট হাউস বলেছিল, তিনটি প্রধান উদ্দেশ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে এ সম্মেলন। এরমধ্যে প্রথমটি হল, কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াই; দ্বিতীয়ত, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই; এবং সর্বশেষ, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশ দাওয়াত না পাওয়ার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বাংলাদেশকে যদি দাওয়াত না দিয়ে থাকে তবে সেটা বাংলাদেশের জন্যই 'অভিশাপরূপী আশীর্বাদ' (আপাতদৃষ্টিতে খারাপ মনে হলেও, ফলাফল ভালো)। কারণ আমেরিকার এই গণতন্ত্র নিয়ে পৃথিবী খুব একটা নড়েচড়ে উঠবে না। কারণ ওদের নিজের দেশেই গণতন্ত্র নেই।"
আন্তর্জাতিক রাজনীতির এই বিশ্লেষক বলেন, "দাওয়াত দিলে বরং বাংলাদেশ যাবে কি যাবে না সেটা নিয়ে একটা চিন্তা ছিল। আমেরিকার উচিৎ হবে তাদের নিজ দেশের গণতন্ত্র দেখা, কারণ সেটা একেবারে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এই গণতন্ত্র নিয়ে পৃথিবী জয় করার মতো অবস্থা আমেরিকার এখন আর নেই।"