ইরানের আশপাশের ১১ দেশে ঘাঁটি গেঁড়ে আছে ৭০ হাজার মার্কিন সেনা
মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের সেনা কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানির মৃত্যুর পর 'কঠোর প্রতিশোধের' শপথ গ্রহণ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান।
সোলেইমানিকে হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ইরানি একটি বাহিনী বাগদাদে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালালে মার্কিন সেনা সদরদপ্তর পেন্টাগন মধ্যপ্রাচ্যে আরও সাড়ে তিন হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয়। এছাড়াও ইতালিতে ঘাঁটি গেঁড়ে থাকা মার্কিন বাহিনীকে বলা হয় প্রস্তুত থাকতে।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে বেশ কয়েকটি সেনা, বিমান ও নৌঘাঁটি। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এই সামরিক বাহিনীর শক্ত অবস্থান থাকলেও ইরানের হুঙ্কারে নড়চড়ে বসেছেন তারা।
সামরিক তথ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার এর হিসাব অনুযায়ী সামরিক শক্তিমত্তায় বিশ্বের এক নম্বর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সামরিক বাহিনীর মোট সদস্য সংখ্যা ২১ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ জন। এরমধ্যে বর্তমানে দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছেন ১২ লাখ ৮১ হাজার ৯০০ জন। রিজার্ভ ফোর্স হিসাবে আছে আরও ৮ লাখ ৬০ হাজার।
অন্যদিকে, সামরিক শক্তিমত্তায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানের অবস্থান ১৪ নম্বরে। দেশটির সামরিক বাহিনীর মোট সদস্য সংখ্যা ৮ লাখ ৭৩ হাজার। এরমধ্যে বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছেন ৫ লাখ ২৩ হাজার। রিজার্ভ ফোর্স হিসাবে আছে আরও সাড়ে তিন লাখ সেনা।
মার্কিন সংবাদ সংস্থা ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হিসাব মিলিয়ে দেখা যায়, কেবলমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের ১১টি দেশেই প্রায় ৭০ হাজার মার্কিন সেনাসদস্য ঘাঁটি গেঁড়ে বসে আছে। ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তবে দেশটির চারপাশে ঘিরে থাকা এই বিশাল সংখ্যক মার্কিন সেনাদের মোকাবেলা করাটাই ইরানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।
ইরাকে ছয় হাজার সেনা
মার্কিন সেনাকর্মকর্তারা কখনোই জানান না, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাকে ঠিক তাদের কত জন সৈন্য অবস্থান করছে বা কোথায় কোথায় তাদের অবস্থান। ধারণা করা হয়, ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় হাজার সৈন্য রয়েছে। এই সৈন্যদের বেশিরভাগই গ্রিন জোন, রাজধানী বাগদাদের প্রাচীরঘেরা কূটনৈতিক এলাকা এবং আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতে অবস্থান করছে। গত নভেম্বরে মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এলাকাটি পরিদর্শন করে যান।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার চলমান দ্বৈরথে উত্তাপ ছড়াচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাকেও। যার প্রভাব পড়েছে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন নাগরিকদের ওপর। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের সে দেশ থেকে সরে যেতে বলেছে। এরপর শনিবারই মার্কিন সামরিক ঘাঁটি গ্রিন জোন ও আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতে রকেট হামলা চালানো হয়। তবে ওই হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কিনা তা জানা যায়নি।
সিরিয়ায় আনুমানিক ৮০০ সেনা
সিরিয়ার কোন যায়গায় কতজন মার্কিন সৈন্য আছে সে বিষয়েও মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে মার্কিন কর্মকর্তারা। গত অক্টোবরে সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর এখনো সেখানে ৮০০ সৈন্য আছে বলে ধারণা করা হয়। এর আগে সেখানে দুই হাজার মার্কিন সৈন্য ছিল।
আফগানিস্তানে ১৪ হাজার
মধ্যপ্রাচের দেশ ইরানের প্রতিবেশী দক্ষিণ এশীয় দেশ আফগানিস্তানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৪ হাজার সেনা সদস্য। যুদ্ধবিরোধী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ সতর্ক করেছে, ইরান-আমেরিকা যুদ্ধ লাগলে এই আফগানিস্তান আরেকটি রণক্ষেত্র হবে। গত নভেম্বরে আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান ঘাঁটিতে আকস্মিক এক সফরে যান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কুয়েতে ১৩ হাজার
কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, কুয়েতের বিভিন্ন ঘাঁটিতে প্রায় ১৩ হাজার মার্কিন সেনা সদস্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের পর এই দুটি দেশ প্রতিরক্ষা সহায়তার একটি চুক্তি করে। সেই চুক্তির কারণেই এখনো কুয়েতে মার্কিন সেনারা অবস্থান করে।
জর্ডানে তিন হাজার
ইরাক, সিরিয়া, ইসরাইল, ফিলিস্তিন বেষ্টিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগতভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। দেশটির মুয়াফফাক বিমান ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের আইএস বিরোধী অভিযানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ও মিসাইল উৎক্ষেপণস্থল। ধারণা করা হয় জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় তিন হাজার সেনা সদস্য অবস্থান করছে।
সৌদি আরবে রয়েছে তিন হাজার সেনা
ধারণা করা হয় মুসলমানদের তীর্থভূমি মধ্য প্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে প্রায় তিন হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছে। এরমধ্যে ইরানের সঙ্গে সংকটের উত্তেজনা বাড়ায় গত অক্টোবরে সেখানে আরও বেশকিছু সেনাসদস্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে পেন্টাগন। মধ্যপ্রাচ্যের দুই সম্পদশালী দেশ ইরান ও সৌদি আরব দীর্ঘ সময় ধরে আঞ্চলিকভাবে শত্রুভাবাপন্ন। বন্ধু দেশ সৌদি আরবের তেল ও গ্যাস সুবিধার ওপর হামলার ঘটনায় ওয়াশিংটন বরাবরই ইরানকে দায়ী করে আসছে। তবে ইরান বারবারই তা অস্বীকার করেছে।
বাহরাইনে সাত হাজারের বেশি
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৌঘাঁটি। দ্বীপ দেশটির এই নৌঘাঁটি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে হাজার হাজার মার্কিন সেনা প্রবেশ করে। দেশটি ইরানের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী অবস্থানকে সমর্থন করে।
ওমানে ৬০০ সৈন্য
প্রতিবেশী অন্য দেশগুলো মতো খুব বেশি মার্কিন সৈন্য ওমানে নেই। পুরো সংখ্যাটা মোটামুটি ছয়শো এর আশেপাশে। মার্কিন বিমান এবং যুদ্ধজাহাজ যাতে ওমানের বন্দরে নামতে পারে সে লক্ষ্যে গত মার্চে ওমানের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র। আরব উপদ্বীপের দেশ ওমান হরমুজ প্রণালীর কাছে অবস্থিত হওয়ায় তেল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশটি বড় ভূমিকা পালন করে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঁচ হাজার
হরমুজ প্রণালীর নিকটবর্তী আরেকটি দেশ হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। যাদের রয়েছে তেল বাণিজ্যের ওপর বিশেষ প্রভাব। ঐতিহাসিকভাবে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র এই দেশটিতে বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন সেনাসদস্য অবস্থান করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বে দেশটি সরাসরি কোন পক্ষ না নিয়ে ইরানকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
কাতারে ১৩ হাজার
মধ্যপ্রাচ্যের ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সেনা ঘাঁটিটি রয়েছে ছোট্ট দেশ কাতারে। কাতাদের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটি মধ্যপ্রাচ্যেরই সবচেয়ে বড় সামরিক আস্তানা। এই দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার সেনাসদস্য অবস্থান করছে। ২০১৮ সালে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করলে ওই ঘাঁটি শক্তিশালী করতে আরও এক দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করে কাতার।
তুরস্কে আড়াই হাজার সেনা
মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপের প্রবেশদ্বার দেশ তুরস্কের ইনসারলিক বিমান ঘাঁটিতেও বেশকিছু মার্কিন সৈন্য রয়েছে। তবে দেশটিতে অবস্থানরত বেশিরভাগ সৈন্য ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ২৯টি দেশের জোট ন্যাটোর সদস্য।