করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষায় শতভাগ সাফল্য দাবি করেছে চীন
ঘাতক করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে পৃথিবীজুড়েই তৎপর নানা দেশের সরকার ও বিজ্ঞানীগণ। লাখো মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া এই জীবাণুর সংক্রমণ ঠেকাতে তোরজোরের কমতি নেই সিংহভাগ দেশেই। এই পরিস্থিতির মধ্যেই চীনের গবেষকরা একটি সুসংবাদ দিয়েছেন।
চীনা বিজ্ঞানীদের দাবি, তাদের তৈরি প্রতিষেধক বানরের দেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর এটি সার্স কোভ-২ ভাইরাস প্রতিরোধে শতভাগ সফলতা অর্জন করেছে। এটি চীনের তৈরি প্রথম প্রতিষেধক বা টিকা। এই সাফল্যের ভিত্তিতে এখন কোভিড-১৯ রোগ সফলভাবে প্রতিরোধ করার নতুন আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
পিকোভ্যাক নামের প্রতিষেধকটি তৈরি করেছে বেজিংভিত্তিক সাইনোভ্যাক বায়োটেক। এটি রেসাস ম্যাকাকুয়েস প্রজাতির বানরের দেহে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়।
প্রতিষেধক দেওয়ার পর বানরের দেহে কোভিড-১৯ রোগের জন্মদাতা সার্স কোভ-২ ভাইরাস প্রবেশ করানো হয়। সাধারণত সংক্রমণের তিন সপ্তাহ পর কোভিড-১৯ রোগের জন্ম হয় রোগীর শরীরে।
গবেষণার ফলাফল নিয়ে বৈজ্ঞানিক সাময়িকী সায়েন্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিনের প্রভাবে নির্দিষ্ট সময় পড়ে বানরগুলোর দেহে কোভিড-১৯ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি জন্ম নেয়। অর্থাৎ, প্রাণীটির দেহের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উদ্দীপ্ত করে ভাইরাস প্রতিরোধী জৈব-রাসায়নিক তৈরি করতে ভ্যাকসিনটি শতভাগ সফলতা অর্জন করেছে। এমনকি করোনাগোত্রের ভাইরাস ছাড়াও বানরের দেহে অন্যান্য রোগের উৎস বলে পরিচিত সাধারণ ভাইরাসকেও প্রতিরোধ করেছে এটি।
গবেষণার অংশ হিসেবে আরেকদল বানরকে পিকোভ্যাক প্রতিষেধক দেওয়া হয়নি। এসব বানরের ফুসফুসে মাত্র এক সপ্তাহ পরেই করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। এসময় বানরগুলো মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়।
মানবদেহের ফুসফুসেও এভাবেই সংক্রমণ ছড়িয়ে শ্বাসকষ্টের জন্ম দেয় করোনাভাইরাস।
চীনে অবশ্য এটাই একমাত্র গবেষণাধীন ভ্যাকসিন নয়। গত এপ্রিল থেকে মানবদেহেও প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করার কথা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাতে জানা গেছে। চীনের সামরিক বাহিনীর তৈরি এমনই আরেক প্রতিষেধক বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের দেহে প্রয়োগ করে দেখা হচ্ছে।
তবে চীনে বর্তমানে করোনা রোগীর পরিমাণ কমে আসায় বাধ্য হয়েই এখন গবেষণায় প্রাইমেট গোত্রীয় প্রানীকূলের ওপর ভ্যাকসিন টেস্টের মাত্রা বাড়িয়েছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। ২০০৩ সালে করোনা গোত্রের আরেক ভাইরাস সার্স মহামারির পরেও এভাবে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। ধারণা করা হয়, চীনে এখন মাত্র কয়েকশ' করোনা রোগী রয়েছেন।