কাবুল বিমানবন্দরে আরেকটি হামলা হতে পারে: জো বাইডেন
কাবুল বিমানবন্দরে আরেকটি হামলার সম্ভাবনা রয়েছে বলে হুঁশিয়ার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রোববারেই এটি ঘটতে পারে বলে তাকে জানিয়েছেন কমান্ডারেরা।
গত বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরের নিকটে আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রায় ১৭০ জন নিহত হয়।
এ অবস্থায় মার্কিন নাগরিকদেরকে বিমানবন্দরের আশেপাশের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
ইসলামিক স্টেট গ্রুপের একটি স্থানীয় শাখা- ইসলামিক স্টেট ইন খোরাসান প্রদেশ (আইএস-কে) এ হামলার দায় স্বীকার করে। হামলার প্রতিশোধ হিসেবে শুক্রবার গভীর রাতে পূর্ব আফগানিস্তানে ড্রোন হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এ হামলায় দু'জন 'হাই প্রোফাইল' আইএস-কে সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের।
নিহত সে দুই ব্যক্তির একজনকে বোমা হামলায় পরিকল্পনাকারী এবং একজনকে পরিকল্পনায় সহায়তাকারী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে, কাবুল বিমানবন্দরে হামলার পরিকল্পনায় তারা সরাসরি জড়িত ছিল কি না তা স্পষ্ট নয়।
এদিকে শনিবারের এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, "এই আক্রমণই শেষ আক্রমণ নয়। আমরা সে হামলায় জড়িত যেকোনো ব্যক্তিকে খুঁজে বের করব এবং নিজেদের কাজের ফল ভোগ করতে হবে তাদেরকে"।
তবে এ বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছে তালেবান। তাদের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলে, আমেরিকানদের উচিত ছিল তাদের সাথে আগে পরামর্শ করা।
আফগানিস্তানের জিহাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে চরমপন্থী এবং সহিংস বলা যায় আইএস-কে কে। দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবানের সাথে রয়েছে তাদের বেশ বড় কিছু পার্থক্য।
মার্কিন সৈন্যরা এ অবস্থায়ই বিমানবন্দর থেকে তাদের সৈন্যদের প্রত্যাহার চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে আফগানিস্তানে অবস্থিত মার্কিনদের মোট সংখ্যা ৪ হাজার, যেখানে গত সপ্তাহে তা ছিল ৫,৮০০।
এছাড়া, দু' সপ্তাহ আগে বিমান চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে কাবুল বিমানবন্দর থেকে ১ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে আফগান ও অন্যান্য দেশের মানুষ। তবে, উচ্ছেদ শুরুর পর কয়েকদিন বিপজ্জনক থাকতে পারে বলে আগেই সতর্ক করেছেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা।
ইউরোপীয়ান দেশগুলোর মাঝে সর্বোচ্চ সংখ্যক আফগান নাগরিককে সরিয়ে নেওয়া দেশ ইতালির শেষ ফ্লাইটটি গত শনিবার রোমে পৌঁছে। দেশটি জানায়, তারা প্রায় ৫,০০০ আফগান নাগরিককে কাবুল থেকে সরিয়ে নিয়েছে।
এদিকে ফ্রান্স জানায় যে, ১৭ আগস্ট থেকে তারা ২,৮০০ এরও বেশি আফগান নাগরিককে সরিয়ে নেয়। আরও প্রায় ৪,০০০ আফগানকে সরিয়ে নিয়ে গেছে জার্মানি।
যুক্তরাজ্যের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল স্যার নিক কার্টার বলেছেন, এটা 'হৃদয়বিদারক' যে তারা সবাইকে উদ্ধার করতে সক্ষম হননি।
তাছাড়া, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবানরা বিমানবন্দরের চারপাশে চেকপোস্টের আরও কিছু স্তর স্থাপন করেছে এবং বেশিরভাগ আফগানদেরকে তারা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
তবে, আকাশপথে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাওয়ায় অনেক আফগান এখন পাকিস্তানের সীমান্ত দিয়ে পূর্ব দিক দিয়ে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। আফগানিস্তানের দক্ষিণদিকের শহর স্পিন বলদাকের কাছে সীমান্তের কিছু গেট খোলা থাকায় অনেকেই সেদিক দিয়ে দেশত্যাগ করছে।
এদিকে, তালেবানরা ১৫ আগস্ট কাবুল দখল করার পর থেকে, সাহায্য দাতারা তাদের তহবিল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখায় এবং আতঙ্কিত আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে তাদের অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা চালানোয় অচল হয়ে পড়েছে আফগান অর্থনীতি।
এ অবস্থায় শনিবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ব্যাংকের বাইরে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়। একজন ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেন, "যদি এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে এবং সরকারের কর্মচারীরা তাদের বেতন না পায় অথবা কোনো ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে তার টাকা উঠাতে না পারে, তাহলে এর ফলাফল হবে খুবই ভয়াবহ। "
- সূত্র- বিবিসি