কেন অক্সফোর্ডের ডিকশনারিতে ২৬টি কোরিয়ান শব্দ যুক্ত করা হলো
সদ্য প্রচার পাওয়া স্কুইড গেম দেখে হোক কিংবা বিটিএসের বাটার, ডিনামাইটের মতো হিট গানগুলো শুনে হোক- আপনার জীবনে যে কিছুটা হলেও কোরিয়ান প্রভাব পড়বে, সে সম্ভাবনা অশেষ।
এই প্রভাব থেকে বোধহয় মুক্ত হতে পারে নি অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারিও। তাইতো এর সর্বশেষ সংস্করণে কোরিয়ান বংশোদ্ভূত ২৬টি নতুন শব্দ যুক্ত করেছে অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষ।
"আমরা কোরিয়ান তরঙ্গের একেবারে শীর্ষে আরোহন করতে যাচ্ছি", এক বিবৃতিতে এমনটিই বলেছে ডিকশনারি কর্তৃপক্ষ।
তালিকার বড় অংশ জুড়ে রয়েছে কোরিয়ার খাবারের নাম। যেমন-
- বানচান- ভাতের সাথে পরিবেশন করা সবজির সাইড ডিশ
- বুলগোগি- কোরিয়ান রান্নায় গরু বা শূকরের মাংসের পাতলা টুকরো যা প্রথমে ম্যারিনেট করে পরে গ্রিল অথবা স্টার-ফ্রাই করা হয়।
- কিমবাপ- সামুদ্রিক শৈবালে মোড়ানো বাইট সাইজের কোরিয়ান ডিশ যার মধ্যে ভাত এবং অন্যান্য উপাদান মিশ্রিত থাকে।
তালিকায় থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার পপ সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বমূলক অন্যান্য শব্দগুলো যেন স্কুইড গেম, প্যারাসাইট এবং বিটিএস- এর আন্তর্জাতিক সাফল্যকেই মেলে ধরে-
- হালিয়্যু- দক্ষিণ কোরিয়া এবং এর জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক আগ্রহ, যা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, টিভি, ফ্যাশন এবং খাবারের বৈশ্বিক সাফল্যের প্রতিনিধিত্ব করে।
- কে ড্রামা- কোরিয়ান ভাষায় এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় নির্মিত টেলিভিশন সিরিজ।
- মানহোয়া- কার্টুন এবং কমিক বইয়ের একটি কোরিয়ান ধারা, যা প্রায়ই জাপানি মাঙ্গা দ্বারা প্রভাবিত।
- মুকবাং- সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও (লাইভস্ট্রিম) যেখানে কোন ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণে খাবার খেয়ে থাকে আবার একই সাথে দর্শকদের সাথে যোগাযোগ করতে থাকে।
অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির ভাষ্যে, "তারা দেখায় কিভাবে মহাদেশের বিভিন্ন অংশে এশিয়ানরা তাদের নিজস্ব স্থানীয় প্রেক্ষাপটে শব্দগুলোর উদ্ভাবন ও বিনিময় করে, তারপর এই শব্দগুলোকে বিশ্বের বাকি ইংরেজি ভাষীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়; এইভাবে কোরিয়ান তরঙ্গ ইংরেজি শব্দের সাগরে ঢেউ তুলতে থাকে"।
একটি গ্লোবাল মাইন্ডসেট
কিংস কলেজ লন্ডনের সংস্কৃতি ও শিল্প নিয়ে গবেষণাকারী ড. হাই-কিউং লিয়ের মতে, "কে-পপের প্রথম সাফল্যের পর ১০ বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে, ইতিমধ্যে তাই কোরিয়ান সাংস্কৃতিক প্রযোজকদের একটি গ্লোবাল মাইন্ডসেট তৈরী হয়ে গেছে"।
কে-ড্রামা এবং কে-পপের উত্থানের দিকে তাকিয়ে লি বলেন, ভৌগলিক এবং ভাষার পার্থক্য সত্ত্বেও কে-ড্রামার চরিত্রগুলো এমন যে, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ সহজেই এর সাথে নিজেদের মিল খুঁজে পায়।
"চরিত্রগুলোর খুব বেশি আশা নেই, ভবিষ্যত নেই এবং তারাও কেবল বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে"।
"এই নাটক বা চলচ্চিত্রগুলো বিনোদনমূলক, এবং তাদের এমন অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে মানুষের সাথে একাত্ম হতে পারে"।
"তারা সমাজ এবং সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থার একটি সমালোচনা উপস্থাপন করে, যা মানুষেরা নিজেদের চরিত্রের মাধ্যমে সম্পর্কযুক্ত করতে পারে"।
তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই ইন্ডাস্ট্রি পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে মিশেছে এবং তার বিশ্বাস, এর স্রোত বাড়তেই থাকবে।
তাছাড়া প্রযুক্তি এবং প্রতিভার পরিপ্রেক্ষিতে, তারা অত্যাধুনিক এবং উচ্চমানের কন্টেন্ট উৎপাদনের ক্ষমতা রাখে", যোগ করেন লি।
কোরিয়ান সংস্কৃতির উত্থান
মনে আছে 'গ্যাংনাম স্টাইল' খ্যাত র্যাপার সাইয়ের কথা! দক্ষিণ কোরিয়ান পপতারকা হিসেবে ২০১২ সালে তিনিই প্রথম ইউকে টপচার্টের শীর্ষে উঠেছিলেন।
অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র প্যারাসাইট বর্তমানে যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি আয় করা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র।
পপ গ্রুপ বিটিএস যুক্তরাজ্যে চার্ট-টপিং অ্যালবাম স্কোর করা প্রথম কোরিয়ান এক্ট- তাছাড়া এই বছরই তারা রেডিও ওয়ানে হাজির হয়ে বিশেষ লাইভ লাউঞ্জ পারফরম্যান্স রেকর্ড করেছে।
আর সর্বশেষ সংযোজন স্কুইড গেম নেটফ্লিক্সের সবচেয়ে বেশিবার দেখা সিরিজ হতে চলেছে- এটি যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ১০ এর তালিকায় রয়েছে এবং এর ৯৫% দর্শকই কোরিয়ার বাইরের!
- সূত্র- বিবিসি