ক্রিসেনথেমামে নারুহিতোর জমকালো অভিষেক
নিজেকে জাপানের ১২৬তম সম্রাট ঘোষণা করে মঙ্গলবার ক্রিসেনথিমাম সিংহাসনে আরোহণ করেছেন সম্রাট নারুহিতো। এ সময় দর্শনার্থীরা ‘বানজাই’ ধ্বনি দিয়ে তাঁর দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ রাজত্ব কামনা করেন।
রাষ্ট্রের প্রতীক ও জনগণের কাছাকাছি থাকার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করার জন্য ইমপেরিয়াল প্যালেসে নারুহিতোর রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তাঁকে অভিনন্দন জানান এবং তিনবার ‘বানজাই’ বলে উল্লাস প্রকাশ করেন। এ উল্লাসের মানে হল, ‘১০ হাজার বছরের’ দীর্ঘজীবন কামনা।
‘আমি দেশের ভেতরে ও বাইরে ঘোষণা করছি যে, আমি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছি,’ রাজকীয় সিংহাসনের ভেতরে দাঁড়িয়ে বলেন নারুহিতো।
তারপর তিনি বলেন, ‘শপথ করছি যে, আমি সংবিধান অনুযায়ী কাজ এবং রাষ্ট্র ও জাপানের জনগণের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আমার দায়িত্ব প্রতিপালন করব। সেই সঙ্গে মানুষের সুখ ও বিশ্বের শান্তির জন্য সর্বদা প্রার্থনা করব। আমি সর্বদা মানুষের পাশে আছি।’
অনুষ্ঠানে নারুহিতোর পরনে ছিল খয়েরি-কমলা রঙের আনুষ্ঠানিক জামা। মাথায় ছিল কালো পাগড়ি জাতীয় পোশাক।
নারুহিতোর আরোহণ করা ‘তাকামিকোরা’ নামের সিংহাসনটি ২১ ফুট উঁচু ও কারুকার্যময়। এটি ১৫০ বছর আগে জাপানের প্রাচীন রাজধানী কিয়োটোর সাবেক রাজপ্রাসাদে ছিল।
সম্রাট আকিহিতো সিংহাসন ছেড়ে দিলে তাঁর বড় ছেলে নারুহিতো গত মে মাসে দায়িত্ব পান। তখন থেকে শুরু বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে মঙ্গলবারের সিংহাসন আরোহণ অনুষ্ঠান ছিল সর্বোচ্চ আয়োজন। বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো বংশতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের ১২৬তম সম্রাট হলেন নারুহিতো। এ রাজতন্ত্রের রয়েছে দেড় হাজার বছরের ইতিহাস।
অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে অনেক সময়, প্রচেষ্টা ও অর্থ ব্যয় করা হলেও মূল অনুষ্ঠান ছিল মাত্র ৩০ মিনিটের। এতে জাপানের ভেতরের ও বাইরের দুই হাজার অতিথি অংশ নেন।
এর আগে সকালে ৫৯ বছর বয়সী সম্রাট সাদা পোশাক পরে তিনটি মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করেন।
সিংহাসন আরোহণ অনুষ্ঠান শেষে নারুহিতো ও তাঁর স্ত্রী মাসাকো ৪০০ বিদেশি অতিথি এবং দেশের প্রশাসন, আইন ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধি ও তাদের সঙ্গীদের সম্মানে রাজকীয় ভোজের আয়োজন করেন।
বিকালে এক প্যারেড অনুষ্ঠানের কথা ছিল। তবে কদিন আগের হাগিবিস ঘূর্ণিঝড়ে অনেকের প্রাণহানির কারণে এটি ১০ নভেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নারুহিতো ও মাসোকোকে জাপানি জনগণ উষ্ণভাবে স্বাগত জানিয়েছে।
অক্সফোর্ড-পড়ৃযা নারুহিতো একজন ইতিহাসবিদ, বেহালাবাদক ও নৌপরিবহন বিশেষজ্ঞ। সম্রাজ্ঞী মাসাকোও হার্ভার্ডে শিক্ষিত। পেশায় ছিলেন কূটনীতিক। তাদের একমাত্র সন্তান রাজকুমারী আইকো।
নারুহিতোর ছেলে সন্তান না থাকায় তাঁর উত্তরাধিকার কে হবেন তা নিয়ে চিন্তা দেখা দিয়েছে। তাঁর ৮৩ বছর বয়সী একজন চাচা থাকার পাশাপাশি দুজন সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী রয়েছেন- ছোট ভাই যুবরাজ আকিশিনো ও ১৩ বছরের এক ভাতিজা। যার ফলে ভবিষ্যতে হয়তো নারীদের সিংহাসনে আরোহণের পথ করে দেওয়া হতে পারে।
শিনজো আবে ও তাঁর অতি রক্ষণশীল সমর্থকরা শুধুমাত্র পুরুষদের ক্রিসেনথেমামের উত্তরাধিকারিত্বের পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন রাখতে চান। তবে সাধারণ জনগণের অধিকাংশই নারীদেরকে সিংহাসনে আরোহণের অনুমতি দেওয়ার পক্ষে।