চীনে জুলাইয়ের পর প্রথমবারের মতো স্থানীয় সংক্রমণ শূন্য
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/08/24/3002.jpg)
গত জুলাই মাসে চীনে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম স্থানীয়ভাবে নতুন কোনো সংক্রামণের খবর পাওয়া যায়নি।
তবে, আগামী সপ্তাহগুলোতে সংক্রমণের এই সংখ্যা শূন্য থাকবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই বেইজিংয়ের "জিরো টলারেন্স" নীতি পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।
জুলাইয়ের শেষের দিকে চীনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর নানজিং-এ ডেল্টা ধরণের সংক্রমণ শুরু হয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, বিদেশ থেকে আসা এই ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা কমপক্ষে ১২০০ জন আক্রান্ত হয়েছে।
ডেল্টার প্রাদুর্ভাব দ্রুতই দেশব্যাপী শঙ্কা জাগিয়ে তোলে। এর প্রেক্ষিতে রাজনীতিবিদ ও চিকিৎসা পেশাজীবীরা স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে দেশের জনসাধারণকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানান।
স্থানীয়ভাবে লকডাউন, কোয়ারেন্টিন, ব্যাপক আকারের করোনা পরীক্ষাসহ জরুরি সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রায় বছরখানেক পর উহানে করোনার নতুন সংক্রামণের প্রেক্ষিতে শহরটির প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের আবারও করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
গত শনিবারে (২১ আগস্ট) সাংহাইয়ের বিমানবন্দরে কার্গো শ্রমিকদের মাঝে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর শত শত মানুষকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের গাও গুয়াংমিং সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা "ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো দ্রুত চিহ্নিত" করছেন। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোকে আলাদা করা এবং এসব অঞ্চলের মধ্যে দ্রুততম সময়ের তথ্য আদান-প্রদানের কাজ করে চলেছেন।
এছাড়া, পরিস্থিতি যথাযথভাবে সামাল দিতে না পারায় অনেক কর্মকর্তাদের পদচ্যুত করা হয়েছে। এ মাসের শুরুতে ঝেংজু শহরের স্থানীয় হেলথ কমিশনের পরিচালক ফু গুইরং-কে তার পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গুইরং-কে গত বছর কোভিড মোকাবেলায় জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়েছিলো।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহতম দেশ হিসেবে চীনের যে অবস্থান তৈরি হয়েছে তা হয়তো আগামী মাসগুলোতে অবনতির দিকে যেতে পারে।
গত সপ্তাহে ইউবিএস ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের একটি গবেষণা পত্রে বলা হয়, "যদিও নতুন সংক্রমণের সংখ্যা কমে গেছে এবং আরও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে, তারপরও আমরা মনে করি কোভিড-সম্পর্কিত কিছু বিধি-নিষেধ সম্ভবত দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকবে।"
বিশ্বব্যাপী বিমান পরিবহন তথ্য সংস্থা সিরিয়ামের মতে, নতুন করে সংক্রমণের প্রদুর্ভাবের পর, গত বছরের তুলোনায় চলতি আগস্ট মাস পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের সংখ্যা ১৯ শতাংশ কমেছে। কর্তৃপক্ষ বিনা মূল্যে বুকিং বাতিল করারও অনুমতি দিয়েছে।
এছাড়া, সর্বশেষ প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর চীনে দেশজুড়ে এক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু ব্রিটেন এবং সিঙ্গাপুরের মত দেশগুলো তাদের নীতি পরিবর্তন করে ভাইরাসের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চলা শুরু করেছে, তাই চীনেরও এমন করা উচিত কিনা তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাঝে দ্বিমত দেখা দিয়েছে।
তবে, এই বিতর্ক কিছুদিন চলার পরই বিশেষজ্ঞগণ এখন মনে করছেন যে, চীনের "জিরো-টলারেন্স" নীতি পরিবর্তনের সময় এখনও আসেনি।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিদ্যার একজন অধ্যাপক ঝেংমিং চেন বলেন, "যদিও চীনের বর্তমান (কোভিড নিয়ন্ত্রণ) নীতিটি উচ্চ মাত্রার সংক্রমণ রোধের পাশাপাশি যথেষ্ট ব্যয়বহুল, তবে এই ব্যবস্থা যথেষ্ট কার্যকর এবং আমি মনে করি না যে এটা সহজেই বাদ দেওয়া হবে।"
ন্যাশনাল হেলথ কমিশন ২২ আগস্টে সংগৃহীত নমুনা থেকে মোট ২১ টি নতুন করোনা সংক্রমণ নিশ্চিত করেছে। আক্রান্ত সবাই মূলত চীনের মূল ভূখণ্ডে ভ্রমণকারী হিসেবে এসেছিলো। তবে, ২২ আগস্টের নতুন এই সংক্রমণের সংখ্যা বিগত ৩২ দিনের তুলনায় কম।
এছাড়া চীনে ১৬ টি উপসর্গবিহীন করোনা সংক্রামণ ধরা পড়েছে। সংক্রমণের এই সংখ্যা গত উনিশ দিনের মধ্যে সবচেয়ে কম এবং নতুন এই সংক্রমণগুলো সবই বিদেশ থেকে
আগতদের মধ্যে ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জানুয়ারির শেষ থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত, চীনের মূল্ভূমিতে মোট ৯৪,৬৫২ টি সংক্রামণ ধরা পড়েছে এবং মারা গেছেন ৪,৬৩৬ জন।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান