জাপানের হোক্কাইডোতে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন
জাপানের মূল দ্বীপপুঞ্জগুলোর সর্ব দক্ষিণের দ্বীপ হোক্কাইডো। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কিছুদিন আগেও বিশ্বে সাফল্যের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হতো একে। কিন্তু সেই হোক্কাইডো শহরেই দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন ঘোষণা করা হলো। দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ধাক্কা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে শহরটি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানা যায়।
ফেব্রুয়ারিতে যখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়, তখন পুরো জাপানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা প্রথম এলাকা ছিল হোক্কাইডো।
তারা সমস্ত স্কুল বন্ধ করে দেয়া, বড় ধরণের জনসমাগম বন্ধ করে দেয়া এবং মানুষকে ঘরে থাকতে 'উৎসাহ' দেয়া শুরু করে সবার আগে।
স্থানীয় সরকার ভাইরাস সংক্রমণ রোধে দৃঢ় সঙ্কল্প ছিল - শনাক্ত করা এবং আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের দ্রুত আইসোলেট করে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করে তারা।
আর তাদের এই নীতি কাজ করে- মার্চের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ঐ অঞ্চলে প্রতিদিন নতুন সংক্রমণের সংখ্যা এক বা দুইয়ে নেমে আসে।
১৯শে মার্চ জরুরি অবস্থা তুলে নেয়া হয় এবং এপ্রিলের শুরুতে স্কুলও খুলে যায়।
কিন্তু জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার ২৬ দিনের মাথায় আবারও জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হয় তারা।
গত সপ্তাহে হোক্কাইডোতে ১৩৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম দফায় সংক্রমণের সঙ্গে এবারের পার্থক্য ছিল, এবার বিদেশ থেকে আসা কারো মাধ্যমে শহরের মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়েছে সেরকম কোনো প্রমাণ নেই।
নতুন আক্রান্তদের কেউই বিদেশি নন, তাদের মধ্যে কেউ গত একমাসের মধ্যে জাপানের বাইরে ভ্রমণও করেননি।
লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক কেনজি শিবুইয়া মনে করেন হোক্কাইডো শহর শুরুতে যথাযথভাবেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল, কিন্তু তারা তাদের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি।
এই ক্ষেত্রে হোক্কাইডোর উদাহরণটি অনেকটা দক্ষিণ কোরিয়ার দেগু শহরের মত। সেখানে ধর্মীয় এক জমায়েত থেকে অনেকের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়ায় আক্রান্তদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা ও কন্টাক্ট ট্রেসিং করার পর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার গণহারে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়, যেটা জাপান সরকার করেনি।
হোক্কাইডোর দ্বিতীয় দফা জরুরি অবস্থার সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে ধারণা করা যায়- এই সমস্যায় যতদিন ভুগতে হবে বলে মানুষ মনে করেছিল, হয়তো তার চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে ভুগতে হবে।
অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে জাপানের 'লকডাউন'এর নিয়মনীতি যথেষ্ট শিথিল। সেখানে অধিকাংশ মানুষই কাজে যাচ্ছে। স্কুল যদিও বন্ধ রয়েছে, তবে দোকানপাট ও পানশালা খোলা রয়েছে।
অধ্যাপক শিবুইয়া মনে করেন আরো কড়া পদক্ষেপ না নেয়া হলে শুধু হোক্কাইডো নয়, পুরো জাপানেই এই 'দ্বিতীয় দফা' সংক্রমণের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।
"স্থানীয়ভাবে আপনি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার পর যদি দেশের অন্যান্য জায়গায় সংক্রমণ হতে থাকে এবং মানুষ অবাধে চলাফেরা করতে থাকে, তাহলে পুরো দেশে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।"
জাপানের জরুরি অবস্থার মেয়াদ চলবে ৬ই মে পর্যন্ত।