ডেল্টার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কম হলেও সুরক্ষা দিবে বুস্টার শট: গবেষণা
কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বিদ্যমান ভ্যাকসিনগুলো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিহত করতে যথেষ্ট কার্যকর নয় বলে জানা গেছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি বিশদ গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য। নতুন এই ফলাফল পূর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিন গ্রহণের পর তৃতীয় ডোজ বুস্টার টিকার প্রয়োজনীতাকেই জোরদার করছে।
সম্প্রতি জানা যায় যে, ফাইজার বায়োএনটেকের এমআরএনএ ভ্যাকসিনের পূর্ণাঙ্গ দুই ডোজ দেওয়ার ৯০ দিন পর থেকেই কমতে থাকে কার্যকারিতা। তবে, একইসঙ্গে যদি অ্যাস্ট্রেজেনেকার এক ডোজ টিকা নেওয়া হয়, তাহলে কোভিডের প্রায় সকল সংক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব।
টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তিরা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের দেহে টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের মতো একই মাত্রার ভাইরাস পাওয়ার কথাও জানায় যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা সিডিসির গবেষণা।
এদিকে, যুক্তরাজ্যে নির্বিচারি পদ্ধতিতে বাছাইকৃত ৩০ লাখের বেশি পিসিআর নমুনা পরীক্ষা বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর সম্প্রতি নতুন একটি গবেষণা পরিচালনা করে। চলতি বছর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিনিধিত্বশীল রূপ ধারণের পর সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি নির্ণয়ে বিশদ এই গবেষণা পরিচালিত হয়। বৃহস্পতিবার গবেষণার প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
"দুই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা জানতে আমরা ক্লিনিকাল ট্রায়াল ডেটার পরিবর্তে বাস্তব-জগতের প্রকৃত তথ্যগুলো পর্যালোচনা করেছি। সংগৃহীত সকল তথ্য-উপাত্তেই ডেল্টার বিরুদ্ধে ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার কার্যকারিতা স্তিমিত হতে দেখা গেছে," বলেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের সেলুলার মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক সিমন ক্লার্ক।
দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের প্রায় সাড়ে চার মাস পর উচ্চ ভাইরাল সংক্রমণ প্রতিরোধে ফাইজারের টিকার কার্যকারিতা সম্ভবত অ্যাস্ট্রাজেনেকার সমান হবে বলে জানান অক্সফোর্ডের সিনিয়র গবেষক কোয়েন পাওয়েলস। পাওয়েলস গবেষণাটির নেতৃত্ব দেন। তবে, সময়ের সাথে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কার্যকারিতার মধ্যে পরিসংখ্যানগত উল্লেখযোগ্য পার্থক্য ছিল না বলেও জানান তিনি।
গবেষণায় নেতৃত্ব দানকারী আরেক গবেষক অক্সফোর্ডের মেডিকেল স্ট্যাটিস্টিকস এবং এপিডেমিওলজির অধ্যাপক সারাহ ওয়াকারের মতে, টিকাদানের মাধ্যমে হার্ড ইম্যুনিটি অর্জনের সম্ভাবনা নিয়েও সন্দেহ বাড়িয়ে তুলছে এই গবেষণা।
ওয়াকার বলেন, "অসংখ্য মানুষকে টিকাদানের মধ্য দিয়ে টিকা গ্রহণ না করা গুটিকয়েক মানুষকেও রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু, টিকা গ্রহণকারীদের সংক্রমণের ক্ষেত্রেই আমরা উচ্চমাত্রার ভাইরাস দেখতে পাচ্ছি। আমার ভয় হলো, এর অর্থ এই যে, টিকা গ্রহণ না করা ব্যক্তি মাত্রই আরও উচ্চঝুঁকিতে রয়েছেন।"
লন্ডনের কিংস কলেজের ফার্মাসিউটিকাল মেডিসিনের ভিজিটিং প্রফেসর পেনি ওয়ার্ড বলেন, ভ্যাকসিনের মধ্য দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও গুরুতর অসুস্থতা কতটুকু এড়ানো সম্ভব সেই তথ্য এখানে নেই। গবেষণার সঙ্গে তিনি যুক্ত না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি বাদ পড়ে গেছে বলে তিনি মনে করেন।
ভিন্ন প্রযুক্তির হলেও যারা ইতোমধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন তারাও এই ফলাফলের ভিত্তিতে বুস্টার শট হিসেবে এমআরএনএ ভ্যাকসিন নিতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রফেসর পেনি ওয়ার্ড আরও বলেন, "ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কোনো ভ্যাকসিনই পুরোপুরি কার্যকর নয়। তবে, এক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তির ঘটনা কম দেখা যাওয়ায় ভ্যাকসিনগুলো অন্তত এখন পর্যন্ত গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া থেকে মানুষকে রক্ষা করছে বলেই প্রমাণিত হয়।"
বিশ্বে এখন পর্যন্ত বহু মানুষ টিকার প্রথম ডোজ না পেলেও সাম্প্রতিক এই ফলাফল পূর্ণাঙ্গ টিকাগ্রহণকারীদের তৃতীয় ডোজ বুস্টারের প্রয়োজনীয়তা সম্মুখে নিয়ে এসেছে।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্র জানায়, ফাইজার ও মডার্নার পূর্ণাঙ্গ দুই ডোজ টিকা গ্রহণকারীরা আট মাস পর তৃতীয় ডোজ টিকা নিতে পারবেন।
তবে, বুস্টার শট কাদের দেওয়া হবে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি যুক্তরাজ্য। ইসরায়েলও সম্প্রতি ফাইজারের তৃতীয় ডোজ বুস্টার টিকাদান শুরু করেছে। প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের জন্য তা ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর বলে জানা গেছে।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ