ডেল্টা প্লাস ভাইরাস কি ফুসফুসের বেশি ক্ষতি করে? কী জানাচ্ছেন ভারতের টিকাকরণ প্যানেল প্রধান
কোভিড-১৯ এর প্রাণঘাতী ডেল্টা প্লাস ধরনটি খুব সহজে ফুসফুসের টিস্যুর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। কিন্তু, তার মানেই 'এ স্ট্রেইন অধিক সংক্রামক বা মারাত্মক অসুস্থতা তৈরি করতে সক্ষম- এমনটা নয়' বলে মন্তব্য করেছেন করোনাভাইরাস টিকাকরণে ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির প্রধান ডা. এন কে অরোরা।
এর আগে, গত ১১ জুন ডেল্টা প্লাস ধরনটি শনাক্ত হয়। সম্প্রতি একে উদ্বেগজনক একটি ধরন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এপর্যন্ত ভারতের ১২টি রাজ্যে ৫১ জনের মধ্যে ডেল্টা প্লাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয় মহারাষ্ট্রে।
বার্তা সংস্থা পিটিআই'কে ডেল্টা প্লাসের ব্যাপারে জাতীয় টিকাকরণ কমিটির ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, "ফুসফুসের মিউকোসাল লাইনিংয়ে সহজে যুক্ত হতে পারে ডেল্টা প্লাস স্ট্রেইন। কিন্তু, এটি সেখানে ক্ষতি করে কিনা- তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাই এখনই এটি অতিসংক্রামক বা মারাত্মক অসুস্থতার জন্য দায়ী- এমনটা বলা সম্ভব নয়।"
তিনি আরও জানান, আরও বেশি রোগী শনাক্ত হলে ডেল্টা প্লাস স্ট্রেইনের প্রকৃত প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। তবে এক বা দুই ডোজ টিকা দেওয়াদের মধ্যে এটির প্রভাব মাঝারি ধরনের বলেই এপর্যন্ত দেখা গেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
"আমাদের আরও ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যেতে হবে, নজর রাখতে হবে এর বিস্তারের ওপর। এমন নজরদারির ভিত্তিতে আমরা এর রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা সম্পর্কেও ধারণা পাব।"
ডা. অরোরা মনে করেন, ডেল্টা প্লাসে আক্রান্তদের মধ্যে উপসর্গযুক্ত এবং রোগের কোনো প্রকার লক্ষণ নেই- উভয় ধরনের সংক্রমিত-ই আছেন। তাই এপর্যন্ত যতজনের মধ্যে এটির বিস্তার শনাক্ত হয়েছে; বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি অনুমান করছেন। আর যারা লক্ষণহীন রোগী তাদের মাধ্যমে এটি আরও ছড়িয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
"আশার কথা বলো, ভারতে জিন বিশ্লেষণের উদ্যোগ সঠিক সময়ে যথেষ্ট গতি পেয়েছে। নমুনা পরীক্ষা করে আমরা রাজ্য পর্যায়ে জানিয়ে দিয়েছি যে, এটি একটি উদ্বেগজনক নতুন ধরন। সেই অনুসারে এখন রাজ্যগুলোকে ব্যবস্থা নিতে হবে। ইতোমধ্যেই, কিছু কিছু রাজ্য ডেল্টা প্লাস ধরনটি শনাক্ত হওয়া জেলাগুলোতে তৃণমূল পর্যায়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন শুরুও করেছে। তাছাড়া, এসব জেলায় এখন টিকাকরণও বাড়াতে হবে," অরোরা বলেছেন।
ডেল্টা প্লাস ধরন সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ জন্ম দেবে কিনা- পিটিআই- এর এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে এ সম্পর্কে কোনো কিছু নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।
"সংক্রমণের নতুন ঢেউ সাধারণত ভাইরাসের অভিযোজন ও নতুন ধরনের হাত ধরেই বিস্তার লাভ করে। এটিও একটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট। কিন্তু, ডেল্টা প্লাস তৃতীয় ঢেউয়ের জন্ম দেবে কিনা- তা নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল। এমন সম্ভাবনা প্রধানত দুই-তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে।"
"প্রথম বিষয়টি হলো, গত তিন মাস ধরে আমরা ভয়াবহ এক দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করছি। এখনও এটি চলমান। গত ৮-১০ দিনে দৈনিক সংক্রমণ সংখ্যা ৫০ হাজারে নেমে এসেছে। তবে দ্বিতীয় ঢেউ চলমান থাকায় দেশের কিছু কিছু জায়গায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা এখনও কমেনি।"
এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের অভিজ্ঞতা থেকে সামাজিক পর্যায়ে নতুন ধরন মোকাবিলার প্রতিক্রিয়া প্রভাবিত হবে বলেও মনে করেন তিনি। তার সঙ্গে দ্বিতীয় ঢেউয়ে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সংখ্যাও বড় ভূমিকা রাখবে।
"দ্বিতীয় ঢেউয়ে যদি অধিকাংশ মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে পরবর্তী ঢেউয়ে সামান্য সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ দেখা দেবে- কিন্তু গুরুতর কোনো অসুস্থতা হবে না। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো টিকাকরণ- আমরা যতো দ্রুত বেশি সংখ্যক মানুষকে অন্তত এক ডোজ হলেও টিকা দিতে পারব, ততো দ্রুত সংক্রমণের পরিবর্তী তরঙ্গের ঝুঁকি হ্রাস পাবে।"
তিনি কোভিড প্রতিরোধী সামাজিক বিধিনিষেধ মেনে চলার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন একমাত্র এমন সতর্কতাই আমাদের বাঁচাতে পারে। সকলে সতর্ক হয়ে চললে প্রথম দুই ঢেউয়ের মতো সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ খুব একটা ক্ষয়ক্ষতি করতে পারবে না- এমন আশাবাদও ব্যক্ত করেন এ বিশেষজ্ঞ।
- সূত্র: এনডিটিভি