তীব্র শীতে যুক্তরাষ্ট্রের লাখো ঘরবাড়ি বিদ্যুতহীন, নিহত ২১
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে এবার রেকর্ড মাত্রায় ঠান্ডা পড়েছে। শীতের তীব্রতার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে চলছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট; এছাড়া একাধিক অঙ্গরাজ্যে কমপক্ষে ২১ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলছে টেক্সাসে। অঙ্গরাজ্যটিতে ৪০ লাখেরও বেশি বাড়িঘর এবং ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎহীন অবস্থায়। মেক্সিকোতে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ! উত্তর-পশ্চিম অরিগনও তীব্র তুষারঝড়ের কারণে বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে।
নর্থ ক্যারলিনাতে সমুদ্র উপকূলবর্তী এক শহরে টর্নেডোর আঘাতে তিনজন নিহত হয়েছেন। টেক্সাসের হিউস্টন এলাকায় ফায়ারপ্লেস থেকে আগুন লেগে প্রাণ হারিয়েছেন একই পরিবারের চারজন। লুইজিয়ানা, কেন্টাকি এবং মিসৌরির মতো অঙ্গরাজ্যে গাড়ির সংঘর্ষ এবং কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ায়ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
শৈত্যপ্রবাহ, বৈদ্যুতিক গোলযোগ, তুষারপাত এবং হিমশীতল বৃষ্টিতে নিউ ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণাঞ্চলের তাপমাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। শিকাগোতে মঙ্গলবার দেড় ফুটের মত বরফ জমে যাওয়ায় স্কুলগুলোর ক্লাস বাতিল ঘোষণা করা হয়।
প্রবল বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেশব্যাপী চলমান টিকাদান কর্মসূচীও প্রভাবিত হয়েছে। জো বাইডেনের প্রশাসন ইতিমধ্যে জানিয়েছে, ভ্যাকসিনের চালান এবং বিতরণে বিলম্ব হতে পারে।
বারবার বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় টেক্সাসের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ঘরবাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকলেও হিউস্টনের উপকন্ঠে অফিসগুলোতে অবশ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ অটুট রাখা আছে।
বিদ্যুহীন অবস্থার সমালোচনার মুখে নগরীর শীর্ষ এক কর্মকর্তা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, "ইতিহাস মনে রাখবে কে তার অংশের কাজ করেছে আর কে করেনি।" তিনি অভিযোগ করেন, বাড়ি নির্মাণের সময় বেশিরভাগ বাড়িতেই তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অস্টিনে ম্যাথু মিসিকের বাড়িতে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিল না, তাপমাত্রা নেমে যায় ১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। নিকটবর্তী একটি হোটেলে রুম ভাড়া নিতে গিয়ে জানতে পারেন, পুরো শহরজুড়েই ব্ল্যাক আউট চলছে। শেষ পর্যন্ত তিনি গাড়ি ভেতর রাত কাটান।
আরেকজন নারী জানান, "এখানে যারা রয়েছেন তাদের কেউই সতর্ক হওয়ার সুযোগ পান নি। তারা এক অন্ধকার দ্বীপে আটকে আছেন। এখানকার সব দোকান পাট বন্ধ এবং রাস্তায় কোনো বাতি জ্বলছে না।"
হ্যারিস কাউন্টিতে আট হাজারের বেশি মানুষকে মডার্নার ভ্যাকসিন প্রদানের কথা ছিল। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে টিকাদান কার্যক্রমও বিঘ্নিত হয়েছে। সীমিত আকারে তিনটি হাসপাতাল, রাইস ইউনিভার্সিটি এবং কাউন্টি কারাগারে ভ্যাকসিন বিতরণ করা হয়েছে।
একাধিক অঙ্গরাজ্য থেকে কর্তৃপক্ষ তুষারাবৃত রাস্তায় দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর জানিয়েছে। হিউস্টনে সন্দেহভাজন বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইডের গ্যাসক্রিয়ায় এক নারীর এবং গাড়িচাপায় আরেক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। হিউস্টন অঞ্চলের রাস্তায় আরও দু'জনের মৃত্যুর জন্য তীব্র ঠাণ্ডাকে দায়ী করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
প্রবীণ এবং গৃহহীন মানুষরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছেন। শহরগুলোতে ঠাণ্ডা থেকে সুরক্ষা দিতে জরুরি ভিত্তিতে উষ্ণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। হিউস্টনের এক আশ্রয়কেন্দ্রে পাঁচ শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে রোববার পশ্চিম টেনেসিতে দশ বছরের এক শিশু বরফ ঢাকা পুকুরে পড়ে মারা যায় বলে দমকল বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মিনেসোটার তাপমাত্রা মাইনাস ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সাউথ ডাকোটার তাপমাত্রা মাইনাস ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে।
বিমান ভ্রমণও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ঠাণ্ডার তীব্রতায়। ২ হাজার ৭০০'র বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়; যার মধ্যে ডালাস ফোর্ট ওয়ার্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ৮০০টির বেশি এবং হিউস্টনের বুশ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ৭০০'র মতো ফ্লাইট বাতিল করে।
কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার শীতার্ত বাসিন্দাদের বাড়িতেই থাকার অনুরোধ জানায়। প্রায় ১০০টির মত বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ওপরে না ওঠা পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিসগুলো।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান