দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই আরও শক্তিশালী করবে এ পুরষ্কার: নোবেলজয়ী ডুফলো
নোবেল পুরষ্কারের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন ফরাসী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এস্তার ডুফলো। পুরষ্কার ঘোষণার পর তিনি বলেছেন, দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে দারিদ্রের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইয়ের শব্দের তীব্রতা আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে এই পুরষ্কার।
এস্তার ডুফলোর বয়স এখন ছেচল্লিশ। তাঁর সঙ্গে যৌথভাবে এ পুরষ্কার পেয়ছেন তাঁর স্বামী বাঙালি-বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ ব্যানার্জী এবং মার্কিন অর্থনীতিবিদ মাইকেল ক্রেমার।
ডুফলো এবং অভিজিৎ হলেন ইতিহাসের পঞ্চম দম্পতি, যারা একই বছর একসঙ্গে একই বিষয়ে নোবেল পেয়েছেন।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস বলছে, দারিদ্র্য বিমোচনের পথ খুঁজতে উন্নয়ন অর্থনীতির গবেষণার ধরনই বদলে দিয়েছেন এই তিন অর্থনীতিবিদ।
সুইডিশ একাডেমি বলছে, সমস্যাগুলোকে স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো আলাদা আলাদাভাবে ভাগ করে দেখলে, ছোট ছোট পর্যায়ে সমাধানের চেষ্টা করলে দারিদ্র্য বিমোচন যে সহজ হতে পারে, সেটাই গবেষণা করে দেখিয়েছেন এই তিন অর্থনীতিবিদ।
তাদের দেখানো পথে মাত্র দু’দশকে উন্নয়ন অর্থনীতির রূপরেখা অনেকটা বদলে গেছে। সরাসরি সুফল পাওয়া গেছে ভারতের এক প্রকল্পে। সেখানে স্কুলে বিশেষ শিক্ষক দিয়ে আলাদাভাবে যত্ন নেওয়ায় উপকৃত হয়েছে ৫০ লাখ শিশু।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক ডুফলোর মতে, এর আগের অনেক নোবেলবিজয়ীর চেয়ে তিনি এবং তাঁর দুই সহকর্মী নিজেদের গবেষণাকাজে অনেক বেশি বাস্তবিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
উদাহরণ হিসেবে তিনি ভারতীয় স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে তাদের পাঠসূচি নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা জানান।
তিনি বলেন, “এটা রকেট সায়েন্স নয়। খুবই স্পষ্ট একটি বিষয়। কিন্তু ভারতে কেউ একে বৈধ পদক্ষেপ হিসেবে গ্রহণ করে না।”
এই অর্থনীতিবিদরা, ভারতীয় স্কুলগুলোর ক্লাসরুমের পরিসর এবং অভিজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ শিক্ষকদের মধ্যকার তুলনা নিয়েও তাদের গবেষণায় কাজ করেন।
অর্থনীতিতে নারীদের আগ্রহ কম
অধ্যাপক ডুফলো বলেন, “আপনি যদি দারিদ্র ও সমস্যার বিরুদ্ধে সত্যিই লড়াই করতে চান তবে প্রত্যেকটি সমস্যা ধরে এগোতে হবে। কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলুন মন থেকে। চেষ্টা করুন কীভাবে বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রাণশক্তিসম্পন্ন মানসিকতা নিয়ে কাজ করা যায়। এটার চাবি হল পরীক্ষা।”
তিনি বলেন, নোবেল পুরষ্কারপ্রাপ্তি তাঁর জন্য অনেক বেশি সম্মানের হলেও এত অল্প বয়সে এই প্রাপ্তির বিষয়টি অপ্রত্যাশিত ছিল।
কারণ, তাঁর মতে, “সচরাচর ষাটোর্ধ্ব পুরুষ অর্থনীতিবিদরাই নোবেল পুরষ্কার পান।”
১৯৬৯ সাল থেকে অর্থনীতিতে নোবেল দেওয়ার পর থেকে অধ্যাপক এস্তার ডুফলো দ্বিতীয় নারী হিসেবে এ পুরষ্কার পেলেন। নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যেই তিনি কনিষ্ঠতম অর্থনীতিবিদ হিসেবে নোবেল পেলেন।
নোবেল পুরষ্কারের অর্থ হিসেবে এই তিন অর্থনীতিবিদ নয় মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার পাবেন।
ডুফলো বলেন, “এই টাকা গবেষণার কাজেই ব্যবহার করব। আশা করি তা থেকে ভালো কিছু হবে।”
“কিন্তু কিছু বিষয় আছে যা টাকার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই পুরষ্কারের যে প্রভাব তা দারিদ্রের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের আওয়াজ বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। সেই আওয়াজের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যারা কাজ করে তাদের কাজগুলো ছড়িয়ে দেব।”
তিনি মনে করেন, এই পুরষ্কার নারী অর্থনীতিবিদদের জন্যও একটি বার্তা দেবে।
তিনি বলেন, “এখানে নারীদের সংখ্যা খুব কম। এর কারণ হল পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতি।”
অন্য কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “অর্থনীতির মতো বিষয়ও যে পৃথিবীজুড়ে পরিবর্তন আনতে পারে, সেটি নারীদের খুব একটা আকর্ষণ করে না। তারা ভালো কিছু করার অংশ হিসবে চাইলে ডাক্তার বা বিজ্ঞানী হওয়াতে অগ্রাধিকার দেয়। তেমন কেউ অর্থনীতিবিদ হতে চায় না।”
তিনি আশা করেন, তাঁর এই পুরষ্কার লাভের পর অনেকের ধারণায় পরিবর্তন আসবে।
“অর্থনীতি মানে কেবল স্যুট-টাই পরে থাকা এবং মাইক্রো-ইকোনমিকস বা ফিন্যান্স নয়। আরও অনেক বড় কিছু। এটা পৃথিবীতে পরিবর্তন আনতে পারে, পৃথিবীকে আরও বাসযোগ্য করতে কাজ করতে পারে।”