নারী শিক্ষায় ভারতের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ: অমর্ত্য সেন
ভারতে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী ও কন্যা শিশুদের সমস্যা এবং সেই তুলনায় বাংলাদেশের অগ্রগতিকে এক আলোচনায় তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর দ্বিতীয় নোবেল জয়ী বাঙালি অমর্ত্য সেন। তিনি বলেন, নারী শিক্ষায় ভারতের চাইতে অনেক অগ্রসর বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে নারীরা শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে এখন ইতিবাচক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমর্থন পাচ্ছেন বলে মনে করেন তিনি।
গত শনিবার শান্তি নিকেতনে নারী শিক্ষা বিষয়ক আলোচনা 'ভারতের মেয়েরা: আজকের চালচিত্র, আজকের করণীয়' শীর্ষক সেমিনারের দ্বিতীয় দিনে দেওয়া বক্তৃতায় এমন তুলনা করেন।
একই সঙ্গে বাংলাদেশ যেসব অর্জন করেছে তা থেকে ভারত পিছিয়ে কেন সেই প্রশ্নও রাখেন তিনি। খবর দ্য টেলিগ্রাফের।
অমর্ত্য সেন বলেন, অবাক করার বিষয় হলো বাংলাদেশে নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ও উন্নতি। সে দেশে নারীদের শিক্ষার হার পশ্চিমবঙ্গ এবং সমগ্র ভারতের চাইতে বেশি। স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশী নারীরা এগিয়ে। এমনকি নারীর জীবনমান এবং তাদের গড় আয়ু ভারতের চাইতে বেশি।
বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠার উন্নতি সম্পর্কে বলেন, এটাও মানতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের কন্যা শিশুরা বেশি সুযোগ-সুবিধা পান। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো- আমরা দু'পাড়ের মানুষই বাঙালি হওয়া স্বত্ত্বেও নারী শিক্ষায় আমাদের পিছিয়ে পড়া কেন? এটা নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে।
এদিকে শান্তি নিকেতনে এই সেমিনারের আয়োজন করেছিল প্রতীচী ট্রাস্ট। সেমিনারে বক্তৃতার সময় সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গেও আলোচনা করেন অমর্ত্য সেন।
নিজেকে একজন সংশয়বাদী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্বিত বোধ করা এই অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ বরাবর ভারতে সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধি এবং নারীর প্রতি সংঘাত ও বৈষম্যর প্রতিবাদ করেছেন।
শনিবার গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে তিনি ভারতীয় নারীদের সংগ্রাম এবং দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা করেন। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে অনেক নারীর জীবন ধ্বংস হচ্ছে বলে জানান অমর্ত্য সেন। বিশেষ করে, এই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল দিল্লি দাঙ্গা প্রসঙ্গ।
অমর্ত্য সেন বলেন, সমগ্র ভারতে এখন হিংসার আগুন জ্বলছে। দিল্লির আগুনটাই শুধু আমাদের চোখে পড়ে। সেখানকার কথাই বলি। এই দাঙ্গায় সংখ্যালঘু কোনো পরিবারের সদস্য বা ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারা হতে পারে। প্রতিহিংসাপূর্ণ হামলায় কোনো সংখ্যাগুরু পরিবারের সদস্যও হতে পারেন একই পরিণতির শিকার। কিন্তু, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি কার? সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার কিন্তু ওই দুই পরিবারের নারী এবং কন্যা শিশুরা।
এই পরিস্থিতিতে নারীর ওপর শারীরিক নির্যাতনের হুমকি প্রসঙ্গে বলেন, অরাজক পরিবেশে স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় নারীদের প্রতি সহিংসতা ও শোষণের মাত্রা অনেক বেশি বাড়ে। তাদের সার্বিক নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সবদিক থেকে এমন বিপদজনক পরিস্থিতিতে নারী ও কন্যা শিশুর জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
সাম্প্রদায়িকতার পাশাপাশি কন্যা শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ভারতে বিদ্যমান সামাজিক বৈষম্যগুলোর প্রতিও আলোকপাত করেন অমর্ত্য সেন।
তার মতে, পরিবারে ছেলে সন্তানদের তুলনায় কন্যা শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা, পুষ্টিকর খাবার সহ নানা প্রকার সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও বৈষম্য করা হচ্ছে। এছাড়া, সামাজিক দুষ্কৃতিকারীদের হাতে অপহৃত ও ধর্ষিত হওয়ার আশঙ্কা নিয়েই তাদের বাঁচতে হচ্ছে।
অমর্ত্য সেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আফসারা আনিকা মিমের ভারত ত্যাগের নির্দেশের যৌক্তিক চ্যালেঞ্জ করেন। সিএএ বিরোধী বিক্ষোভের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করায় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এই ছাত্রীকে ভারত ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
অমর্ত্য সেন বলেন, তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি পত্রিকান্তরে জানতে পেরেছি সে শুধু নিজের ফেসবুক ওয়ালে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভের কিছু ছবি আপলোড করেছিল। সে নিজে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে এমন কোন প্রমাণ তার ছবিগুলো থেকে পাওয়া যায় না। এরপরেও তাকে ভারত ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।