নিজের মেয়েদের অপহরণ করেছিলেন দুবাই শাসক
অপহরণ, জোর করে বাড়ি ফেরানো, নির্যাতন ও হুমকি দেওয়া- এ রকম একগুচ্ছ অভিযোগ ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাকতুমের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ছিল, নিজের ছোট মেয়েকে ১১ বছর বয়সেই সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন শেখ মোহাম্মদ। অভিযোগকারী তারই প্রাক্তন স্ত্রী প্রিন্সেস হায়া বিনতে আল-হুসেইন।
হায়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে, ব্রিটিশ হাইকোর্টে আট মাস আগে এই 'হাই প্রোফাইল' মামলার কার্যক্রম শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার আদালত তথ্য অনুসন্ধানী সিরিজ রায়ে জানিয়েছেন, দুবাই থেকে গত বছর দুই সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে আসা প্রিন্সেস হায়ার অভিযোগগুলোর সত্যতা রয়েছে। ২০০৪ সালে ৭০ বছর বয়সী দুবাই শাসকের ষষ্ঠ স্ত্রী হন হায়া। দুটি সন্তান রয়েছে এ দম্পতির। খবর বিবিসির।
আদালত বলেন, দুবাইয়ের শাসক যে আদালতের প্রতি উদার ও সৎ নন, সেটিও প্রমাণিত হয়েছে।
বিশদ সাক্ষ্য প্রমাণ ও শুনানি শেষে রায়ে ব্রিটিশ আদালত জানান, অন্য স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেওয়া দুই কন্যাকে অপহরণ ও জোর করে দুবাইয়ে ফিরিয়ে নেওয়ার যে অভিযোগ শেখ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে করা হয়েছিল, সেটির সত্যতা পাওয়া গেছে।
ওই দুই কন্যার মধ্যে ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যের সারি কাউন্টির পারিবারিক বাসা থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন শেখ শামসা। কিন্তু তাকে পরে ক্যামব্রিজশায়ার থেকে অপহরণ করে দুবাইয়ে নিয়ে যায় শাসকের লোকেরা। অভিযোগ ওঠে, তাকে সেখানে বন্দি রাখা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে দুবাই গিয়ে তদন্ত করতে চাইলেও ব্রিটিশ পুলিশকে সেই অনুমতি দেয়নি সংযুক্ত আরব আমিরাত।
অন্য মেয়ে শেখ লতিফাও বাড়ি থেকে পালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার ২০০২ সালের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ধরা পড়ায় তিন বছর গৃহবন্দি থাকতে হয় তাকে। ২০১৮ সালে আরও একবার পালানোর চেষ্টা করেন লতিফা। সেবার তার বাবার লোকেরা তাকে ভারতীয় উপকূলের কাছে, সমুদ্র থেকে ধরে নিয়ে যায়।
সে সময় বাবার নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছিলেন লতিফা। ব্রিটিশ আদালত সেটিকে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে রায় দিয়েছেন।
এদিকে, ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় এতদিন শেখ মোহাম্মদকে মধ্যপ্রাচ্যের উদার শাসকদের অন্যতম বলে গণ্য করা হতো। আদালতের এ রায়ের পর সেই বিশ্বাসের জায়গাটি ভালোই নড়বড়ে হয়ে উঠেছে!
অবশ্য রায় প্রকাশের পর এক বিবৃতিতে অভিযুক্ত দুবাই শাসক জানিয়েছেন, সরকারপ্রধান হিসেবে তার পক্ষে ব্রিটিশ আদালতের এই তথ্য অনুসন্ধানী প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রকাশিত রায়কে তিনি একপেশে বলে অভিহীত করেছেন।