ফেসবুকে দ্বিগুণ হয়েছে তালেবান অনুসারীর সংখ্যা, প্রচারণা নিয়ন্ত্রণে তৎপর সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলো
তালেবানের গঠন করতে চলা আফগানিস্তানের নতুন সরকারকে বৈধ কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে এখনও ভাবনা-চিন্তা চলছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের রাজধানীতে। বেশিরভাগ রাষ্ট্রই তাদের স্বীকৃতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাল মেলাতে সামাজিক মাধ্যমও তালেবানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে তৎপর হয়েছে।
ইতোমধ্যেই, ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবের মতো মাধ্যম তাদের সাইটে তালেবান গোষ্ঠীর কন্টেট নিষিদ্ধ করতে নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু, উগ্রবাদী গোষ্ঠীটি সহিংস চিত্র বা ভিডিও'র পরিবর্তে সরকার পরিচালনা সংক্রান্ত বার্তা অনলাইন মাধ্যমে প্রকাশ করায় বিপাকে পড়েছে কোম্পানিগুলো। কারণ, তাদের নিজস্ব আইনে এধরনের প্রচারণা বন্ধের সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা নেই।
মার্কিন দৈনিক দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমে যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে সেগুলোর আওতায় কট্টরপন্থী গোষ্ঠিটির অনলাইন ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছানো রোধ করা যাচ্ছে না।
দৈনিকটির নিজস্ব এক বিশ্লেষণ জানাচ্ছে, গত ৯ আগস্টের পর টুইটার ও ফেসবুকে খোলা হয়েছে তালেবানপন্থী এক শতাধিক নতুন অ্যাকাউন্ট।
অন্যদিকে, ফেসবুকে তালেবানের আনুষ্ঠানিক পেজগুলোর অনুসারী সংখ্যা ১২০ শতাংশ বেড়েছে। লাখ লাখ মানুষ ইউটিউবে দেখছে গোষ্ঠীটির প্রচারিত ভিডিও। টুইটারে মাত্র একদিনেই ১০ লাখের বেশি বার দেখা হয়েছে তালেবানের পোস্ট করা ভিডিওগুলো।
টুইটারে তালেবানের প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদের ফলোয়ার সংখ্যা এখন তিন লাখেরও বেশি। তাঁর পরিচিতি অংশে লেখা, 'তালেবানের আলোচনাকারী, রাজনৈতিক টিমের সদস্য এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক মুখপাত্র।'
হোয়াটসঅ্যাপের মূল মালিকানা প্রতিষ্ঠান ফেসবুক ইঙ্ক তালেবানের প্রচারণা রোধে উদ্যোগ নেয়। কিন্তু, নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, মুজাহিদ সহযোগী এক তালেবান নেতার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ফেসবুক আরোপিত ব্যান এড়িয়ে হোয়াটসঅ্যাপে সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
এব্যাপারে ফেসবুকের এক মুখপাত্র মার্কিন গণমাধ্যম দ্য ইনসাইডারকে বলেন, "আমাদের কোম্পানি তালেবান নেতাদের প্রশস্তিমূলক সকল কন্টেট সরাতে তৎপর রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিতে একদল আফগানিস্তান বিশেষজ্ঞকে কন্টেট মনিটরিং- এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।"
সামাজিক মাধ্যমে প্রায় সকল প্ল্যাটফর্মেই এসব সাইটের আইনভঙ্গ করে এমন কিছু পোস্ট করা থেকে বিরত থাকছেন তালেবান সদস্যরা। 'সহিংসতাকে মহিমামণ্ডিত করা' এবং 'ঘৃণামূলক প্রচারণা' না চালিয়ে তারা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলছেন।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তান বিষয়ক একজন গবেষক আইমান আজিজ টাইমসের কাছে মন্তব্য করেন, তালেবানকে একটি পরিকাঠামোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করার সামাজিক মাধ্যমের বর্তমান নীতিমালাই গোষ্ঠীটিকে অনলাইনে এক নতুন 'শাসক' রুপে প্রতিষ্ঠা করছে।
টুইটারের এক মুখপাত্র বলেছেন, "আফগানিস্তান পরিস্থিতি দ্রুত নানা দিকে মোড় নিচ্ছে। সেখানকার অনেক নাগরিক টুইটারে পোস্ট করে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন। আমাদের প্রধান লক্ষ্য- মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর সেটা নিশ্চিতে আমরা সতর্ক রয়েছি।"
গত মঙ্গলবার ইউটিউবের এক মুখপাত্র ইনসাইডারকে জানান, তালেবান নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত সকল অ্যাকাউন্ট প্ল্যাটফর্ম থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হবে। এটি তাদের দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত নীতিমালারই অংশ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ফেসবুকের এক মুখপাত্র বলেছেন, "সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালেবানের ওপর মার্কিন আইনের আওতায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই বিপজ্জনক সংগঠন সম্পর্কিত আমাদের নিজস্ব আইন অনুসারে তালেবান নিষিদ্ধ। যারা তালেবানের পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে, বা যারা গোষ্ঠীটির প্রতিনিধিত্ব ও প্রশংসা করছে- এমন অ্যাকাউন্টসমূহ আমরা চিহ্নিত ও বন্ধ করা শুরু করেছি।"
"ফেসবুক কোনো নির্দিষ্ট একটি দেশের সরকারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় না, এক্ষেত্রে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করি। তাই ক্ষমতা যার হাতেই থাকুক না কেন, আমাদের বিধিমালা ভঙ্গকারী অ্যাকাউন্টগুলোর বিরুদ্ধে আগামী দিনেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে," যোগ করেন তিনি।
- সূত্র: দ্য ইনসাইডার