বাগরাম ঘাঁটি থেকে শেষ মার্কিন সেনাদলেরও বিদায়
মার্কিন সেনাবাহিনীর শেষ দলটিও শুক্রবার আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান ঘাঁটি থেকে বিদায় নিবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।
এর মাধ্যমে আফগানিস্তানের সামরিক শক্তির কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠা সুবিশাল এই প্রাঙ্গণে মার্কিনীদের আর কোনো অস্তিত্ব থাকছে না। দেশটি থেকে আমেরিকান সৈন্যদের পুরোপুরি প্রত্যাহার এখনই সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলেও, খুব শিগগিরই সে সম্ভাবনা রয়েছে।
বাগরামে প্রথম আমেরিকান সৈন্যদল পা রাখার পর কেটে গেছে প্রায় দুই দশক। ৯/১১ এর হামলার পর তারা এখানকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। আফগান সেনাবাহিনীর হাতে কর্তৃত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে বিনা আড়ম্বরেই এবং এর মাধ্যমেই আমেরিকার দীর্ঘতম যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন অনেকে।
একসময় যে রানওয়ে ছিল জরাজীর্ণ, যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহও ছিল অত্যন্ত কম; সেই বিমানঘাঁটি এই মুহূর্তে যেন নিজ যোগ্যতাবলেই ছোটখাটো একটা শহরে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এখানে ঘাঁটিতে কাজ করা হাজারো সার্ভিস সদস্য এবং কন্ট্রাক্টরদের জন্য দোকানপাট, শরীরচর্চা কেন্দ্র এবং শ্রেণীকক্ষ রয়েছে।
বাগরামের দুই মাইলের রানওয়েতে কালো টায়ার দিয়ে অসংখ্য টেকঅফ ও ল্যান্ডিং এর চিহ্ন দেখা যাবে; যা ছিল সেনাবাহিনী অপারেশনের সময় জাম্পিং পয়েন্ট। এছাড়াও কার্গো বিমান, যুদ্ধবিমান ও অ্যাটাক হেলিকপ্টারের জন্যও জায়গা আছে এখানে। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রত্যেকেই তাদের শাসনকালে এই বাগরাম ঘাঁটি পরিদর্শন করেছেন, প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আফগানিস্তানে শান্তি ও বিজয় ফিরিয়ে এনে সুন্দর ভবিষ্যত উপহার দেয়ার।
কিন্তু কোনোরকম আনুষ্ঠানিকতা বা উৎসব ছাড়াই বাগরাম বিমানঘাঁটি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেয়াকে তালেবানের জন্য একটি বিজয় হিসেবেই ধরা হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে তালেবানরা আফগান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আক্রমণ চালিয়েছে এবং একাধিক জেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বিসমিল্লাহ খান মোহাম্মদীর সাথে কথা বলেন। অস্টিন বলেন, আমেরিকা 'আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পেছনে' কাজ করেছে এতদিন।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবে বাগরাম বিমানবন্দর দিয়েই হাজার হাজার সেনা দেশটিতে প্রবেশ করে। বিগত ২০ বছরের যুদ্ধবিগ্রহে নিহত হওয়া প্রায় ২০০০ আমেরিকান সার্ভিস মেম্বারের জন্য 'এক্সিট পয়েন্ট'ও ছিল এটি। নিহত সদস্যদের পতাকায় মোড়া কফিন যখন নিজ দেশের উদ্দেশ্যে শেষ যাত্রা করে, তখনও বিমানঘাঁটির মধ্য দিয়ে যাওয়া 'ডিজনি ড্রাইভ' নামক প্রধান সড়কে সৈন্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত।
বহু বছর ধরে বাগরাম ঘাঁটি ছিল তালেবানদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু; সুইসাইড বম্বিং ও রকেট হামলার মত আক্রমণ চালায় তারা।
তবে শেষ পর্যন্ত সহিংসতার কাছে হার মেনে নয়, বরং কূটনৈতিক কারণেই মার্কিন সেনারা এখান থেকে বিদায় নিচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই পেন্টাগন আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে নিচ্ছিলো, কিন্তু ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসন ও কাতারের মধ্যে সংঘটিত 'দোহা চুক্তি'র মাধ্যমে মূল সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়। ২০১১ সালে মাঝামাঝিতে এসে এখানে প্রায় ১০০,০০০ মার্কিন সৈন্য এবং ৩৫,০০০ কন্ট্রাক্টর ছিল। এক দশক পরে সেই সংখ্যা কমে ২,৫০০ সেনা ও ১৮,০০০ কন্ট্রাক্টরে এসে পৌঁছেছে।
বাইডেন প্রশাসন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ সৈন্যদলটিকেও আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। কিন্তু প্রত্যাহারের কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করার পর বোঝা যায় তা সেপ্টেম্বরের বেশ আগেই হয়ে যাবে।
বিগত কয়েকদিন যাবত সেনা প্রত্যাহারের এ সময়ে ক্রুরা কার্গো বিমানগুলোতে তাদের শিপিং ক্রেটগুলো বোঝাই করেছে এবং মূল্যবান জিনিসপত্রও সরিয়ে নিয়েছে।
মঙ্গলবার আফগানিস্তানের তদারককারী ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড জানায়, তারা ইতিমধ্যে প্রায় ৯০০ সি-১৭ কার্গোর সমতুল্য জিনিসপত্র আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নিয়েছে এবং ১৬,০০০ যন্ত্রপাতি ধ্বংস করেছে।
- সূত্র- সিএনএন