বাথরুম পাইপে করোনা ভাইরাস
চলতি সপ্তাহে নতুন নাম কোভিড-১৯ পেয়েছে উহানের করোনা ভাইরাস। আক্রান্ত ব্যক্তির নিঃশ্বাস, হাঁচি, কাশি এবং শারীরিক সংস্পর্শে আসলে ভাইরাসটি অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে। এতদিন অন্তত সেই ধারণাই ছিল। কিন্তু এবার নামের মতোই করোনা ছড়িয়ে পড়া নিয়ে পুরোনো ধারণার ভিত্তি ভাঙতে চলেছে ।
গত মঙ্গলবার হংকং কর্মকর্তারা হং মেই হাউজ নামের আবাসিক এলাকার এক বহুতল ভবন থেকে সব বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছেন। তাদের আশঙ্কা ওই ভবনে বাথরুম পাইপের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। খবর সিএনএনের।
ইতোমধ্যে বেশ কিছু রোগীকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মাঝে প্রথম ব্যক্তি ছিলেন ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধ। ওই বৃদ্ধ ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার দেড় সপ্তাহ পর ঠিক তার ১০ তলা নিচে বসবাসকারি আরেক ৬২ বছরের বৃদ্ধার শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে।
ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়, ওই বৃদ্ধা তার ছেলে ও পুত্রবধূর সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে থাকতেন। তাদের দেহেও ধরা পড়েছে ভাইরাস। আর একই ভবনের আরেক বাসিন্দা পুত্রবধূ্টির পিতাও আক্রান্ত হয়েছেন।
ধারাবাহিক এই তিনটি ভাইরাস কেসের পরেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ভবনটি খালি করার সিদ্ধান্ত নেন।
হংকং একটি ঘন জনবসতির অঞ্চল। সেখানে বহুতল ভবনগুলো আকারে ও বাসিন্দার দিক দিয়ে কোনো অংশেই কোনো মহল্লার চাইতে কম নয়।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানান, টয়লেটের ত্রুটিপূর্ণ নিষ্কাশন পাইপের কারণে তারা হং মেই আবাসন এলাকার ৭নং বহুতল ভবনটির ৩০টি তলাই খালি করেছেন।
সার্স সংক্রমণের সূত্র ধরেই এখন কর্তৃপক্ষের কাছে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সন্দেহভাজন উৎস টয়লেটের মল পরিবাহী পাইপ। ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস হংকংয়ের অ্যাময় গার্ডেন হাউজিং এস্টেটে টয়লেটের পাইপ থেকেই ছড়িয়ে পড়েছিল। ওই সময় তিন শতাধিক ব্যক্তি সার্স আক্রান্ত হন এবং প্রাণহানি হয় ৪২ জনের।
এই প্রেক্ষিতে হংকংয়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা মঙ্গলবার থেকেই জোর তদন্ত শুরু করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে ইতোমধ্যেই দেখা গেছে আক্রান্ত বৃদ্ধার বাথরুমের পাইপ কিছুদিন আগেই পরিবর্তন করা হয়েছিল। অর্থাৎ, পাইপ পরিবর্তনের সময় মানব বর্জ্য থেকে নিঃসৃত ভাইরাসবাহী গ্যাস এর জন্য দায়ী হতে পারে। এছাড়াও বদলে ফেলা পাইপগুলো হংকং সরকারের দেওয়া বিশেষ ধরণের বায়ু নিরোধী পাইপও নয়। অভিযোগের আঙ্গুল তাই বদলে ফেলা পাইপের প্রতিই উঠছে।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সংক্রামক রোগ গবেষণা অনুষদের প্রধান বিজ্ঞানী ইভান হুং বলেন, করোনা গোত্রের ভাইরাসের জীবাণু যে মানববর্জ্যে উপস্থিত থাকে সেটা প্রথম দিকের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু ওই অবস্থা থেকে এই ভাইরাস কেমন ক্ষতিসাধন করার ক্ষমতা রাখে, সেটাই এখন খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ চীনের হুবেই প্রদেশে ২৪২ জন আক্রান্ত ব্যক্তি মারা গেছেন। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে শুরু হওয়া সংক্রমণে এটাই একদিনে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির রেকর্ড। বুধবারের মৃতের তুলনায় এটা ১০ গুণ বেশি। এনিয়ে এক হাজার ৩৩৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ১৪ হাজার ৮৪০ জন। স্থানীয় স্বাস্থ্য কতৃপক্ষ এই সংখ্যা নিশ্চিত করেন।