বাড়িটি ভূতুড়ে নয়, প্রমাণের জন্য চীনে ভাড়া পাওয়া যায় ভূত পরীক্ষক
কোনো বাড়িতে 'অপমৃত্যু' ঘটার পর সেটি কারো কাছে বিক্রি করা হয়ে ওঠে প্রায় অসম্ভব; আর বাড়িটি যদি হয় এশিয়ায়, তাহলে তো কথাই নেই। তবে সৌভাগ্যক্রমে, একদল নির্ভীক ফ্রিল্যান্সারের সন্ধান পাওয়া গেছে চীনে, যারা নিশ্চিত করবেন বাড়িটি ভূতুড়ে নয়। বিনিময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ পারিশ্রমিক নেবেন তারা।
চীনে প্রোপার্টি এজেন্ট, মালিক কিংবা সম্ভাব্য ক্রেতারা সম্পদ কেনার আগে তা ভূতুড়ে কিনা পরীক্ষা করার জন্য ভাড়া করে থাকেন 'ভূতুড়ে বাড়ি পরীক্ষকদের'। সাধারণত প্রতি মিনিটে এক ইউয়ান করে পারিশ্রমিক দেওয়া হয় তাদের; আর ২৪ ঘণ্টা বা এক দিন থাকার জন্য দেওয়া হয় ১ হাজার ৪৪০ ইউয়ান বা ২২০ মার্কিন ডলার। চীনের কেন্দ্রীয় প্রদেশ হেনানের সংবাদমাধ্যম দাহে ডেইলির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
প্রতিবেদনে ভূতুড়ে বাড়ি পরীক্ষক ঝাংয়ের বক্তব্যও তুলে ধরা হয়েছে। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর নিজের জন্য তিনি ভূতুড়ে বাড়ি পরীক্ষকের পেশা বেছে নিয়েছেন। দাহে ডেইলিকে দেওয়া তার সাক্ষাৎকার অনুযায়ী, তিনি আরও এক ডজনেরও বেশি মানুষকে চেনেন যারা এই পেশায় নিযুক্ত রয়েছেন।
ঝাং বলেন, "এটি একটি বিশেষ পেশা। তবে এটি পূর্ণ-সময়ের কাজের জন্য নয়; এটি খণ্ডকালীন কাজ হতে পারে। কর্মীদের সারা দেশেই ভ্রমণ করতে হতে পারে এবং তারা জানবেন না পরবর্তীতে তারা কোথায় যাবেন।"
ঝাং আরও বলেন ভূতুড়ে বাড়ি পরীক্ষকদের চাহিদা খুব বেশি নয়। ফলে গত কয়েক বছর ধরে তিনি প্রতি বছর গড়ে একটি করে বাড়ি পরীক্ষার কাজ পেয়েছেন।
তার ক্লায়েন্টরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রোপার্টি এজেন্ট হয়ে থাকেন, যারা ভূতুড়ে সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করেছেন; কিংবা এমন কোনো ব্যক্তি, যিনি মাত্রই একটি ভূতুড়ে বাড়ি কিনেছেন। কিন্তু সেখানে থাকার সাহস পাচ্ছেন না।
ঝাং বলেন, "নতুন ক্রেতারা জায়গাটিতে ঘুমানোর সাহস করেন না; তাই তারা নতুন বাড়িতে প্রথম দিন থাকার জন্য ভূত পরীক্ষকদের টাকার বিনিময়ে ভাড়া করেন। বাড়িটি নিরাপদ কিনা তা যাচাইয়ের জন্যই মূলত এ ব্যবস্থা।"
ভূত পরীক্ষকরা রাতেরবেলা ক্লায়েন্টদেরকে ভিডিও কল দিয়ে বাড়ির প্রতিটি কোণা ঘুরে দেখান।
ঝাংয়ের বন্ধুদের মতে, এটি একটি সহজ কাজ। এক রাতের জন্য নতুন বাড়িতে থাকা এবং এর বিনিময়ে টাকা উপার্জন, খুবই লোভনীয় একটি ব্যাপার। তাই তার অনেক বন্ধুই এই পেশায় আসতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তবে ঝাং জানান, পরবর্তীতে তার কোনো বন্ধুই এই পেশায় স্থায়ী হতে পারেনি। প্রথম দিনেই ভয় পেয়ে তারা কাজ ছেড়ে দেন।
সাধারণত এশিয়া অঞ্চলে মানুষ এমন সম্পদ ও বাড়ি ঘর এড়িয়ে চলে, যেখানে কোনো অপমৃত্যু হয়েছে। অধিকাংশেরই ধারণা, অপমৃত্যুর প্রভাব তাদের জন্য দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ভূতুড়ে সম্পদের আশেপাশের এলাকার বাড়িঘরও তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হয়ে থাকে। কারণ মানুষ ভয়ে সেসব এলাকায় বসবাস করতে চায় না।
এই কারণে, হংকং-এর প্রোপার্টি এজেন্টদের কোনো বাড়ি (যেখানে অপমৃত্যু ঘটেছে) বিক্রি করতে হলে আইনতভাবে তাদেরকে এটি প্রমাণ করতে হয় যে, বাড়িটি ভূতুড়ে নয়।
পূর্ব চীনের সুঝোতে এক মালিক তার বাড়িতেই আত্মহত্যা করেছিলেন। পরবর্তীতে সেই বাড়ি বিক্রির জন্য নিলামে উঠালেও তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে, বাড়িটি যে ভূতুড়ে নয় তা প্রমাণের জন্য ভূত পরীক্ষকদের দিয়ে সেই বাড়ি থেকে টানা ২৪ ঘণ্টা লাইভ স্ট্রিমিং করানো হয়। এ ঘটনা সুঝোতে মোটামুটি হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল।
লাইভ স্ট্রিমটি প্রায় ৫৬ হাজার মানুষ দেখেছিল, তবে কেউই বাড়িটি কেনার দুঃসাহস করেনি। যদি এই বাড়ির ওপর 'অপমৃত্যুর' অপবাদ না থাকতো, তাহলে বাড়িটির মূল্য হতো অন্তত ২.২ মিলিয়ন ইউয়ান।
কিন্তু নিলামে ভিত্তিমূল্য ১.২ মিলিয়ন ইউয়ান ধরা হলেও, শেষ পর্যন্ত ওই দামেও বাড়িটি কেনার আগ্রহ দেখায়নি কেউ।
- সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট