বিস্ফোরণের পরপর কাবুল বিমানবন্দর ও তার আশেপাশের দৃশ্য
গত এক সপ্তাহ ধরেই কাবুল বিমানবন্দরের বাইরের রাস্তাগুলোতে বিশৃঙ্খলা ও হুড়োহুড়ি একটি নিয়মিত দৃশ্য। কিন্তু আগের সপ্তাহের সব বিশৃঙ্খলাকে ছাপিয়ে গেছে বৃহস্পতিবারের একটি মুহূর্ত।
গতকাল সন্ধ্যায় আফগানিস্তান থেকে পালানোর চেষ্টা করা লোকদের ভিড়ে ফাটানো দুটি বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে এখন পর্যন্ত অন্তত ১১০ জন। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৩ জন মার্কিন মেরিন সেনা রয়েছেন। এছাড়া, প্রায় ১৫০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
দুটি বিস্ফোরণের একটি ঘটেছে হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অন্যতম প্রধান ফটক অ্যাবি গেটের সামনে। অন্যটি ব্যারন হোটেলের সামনে, যাদের ওয়েবসাইটে লেখা "কাবুলের সবচেয়ে সুরক্ষিত থাকার ব্যবস্থা"।
অ্যাবি গেটে বিস্ফোরণের পর গোলাগুলি ও সাইরেনের শব্দ শোনা যায়।
এর আগে, উর্দিপরা তালেবান যোদ্ধারা বিমানবন্দরের প্রবেশপথে ভিড় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিল। ঘটনার পরপর ফটকের সামনে টহলরত একজন তালেবান যোদ্ধা বলেন, "আমেরিকানদের উপর একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। সামরিক ও বেসামরিক বেশ কিছু মানুষ মারা গেছে।"
"পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মাটিতে অনেক মৃত মানুষ পড়ে আছে।"
তালেবান এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। অন্যদিকে তালেবানদের প্রতিদ্বন্দ্বী জঙ্গি গোষ্ঠী, ইসলামিক স্টেট খোরাসান, বা আইএসআইএস-কে কর্তৃক সম্ভাব্য হামলার ব্যাপারে এই সপ্তাহে সতর্ক করেছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর এই প্রথম আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা নিহত হলেন।
পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি জন এফ কিরবি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, "আমাদের ভাবনা এবং প্রার্থনা নিহতদের প্রিয়জন ও সতীর্থদের সাথে আছে।"
বিস্ফোরণের পরে টুইটারের এক ভিডিওতে রক্তাক্ত দেহগুলোকে ফুটপাতে স্তূপ করে রাখতে এবং বিমানবন্দরের প্রবেশদ্বারের কাছে একটি নালায় ভাসতে দেখা যায়।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগে উদ্বিগ্ন জনতা ও ফ্লাডলাইটের ঝলকানিকে ছাপিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের পর অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে দেখা যায়।
স্থানীয় একজন সাংবাদিক এবং প্রাক্তন সরকারী কর্মী কাঁদতে কাঁদতে জানান, একজন ট্যাক্সিচালক তাকে ফোন করে জানিয়েছেন আহতদের মধ্যে তার স্বামীও আছেন।
তিনি বলেন, "আমি অনেকবার তাকে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু এরপরও আজ সকালে বিদেশীদেরকে তার সরকারী আইডি কার্ড দেখাতে এসেছিল সে। বাড়িতে আমাদের চার সন্তান। এখন আমাদের সবার কী হবে?"
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ঠিকাদারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি হিসেবে আফগানিস্তানে বহু বছর ধরে কাজ করা সেথ ইডেন বলেন, তিনি তার বন্ধু ও আফগানিস্তানের একজন সাবেক উপমন্ত্রীকে দেশ থেকে বের করে আনার চেষ্টা করছিলেন। বিমানবন্দরে প্রবেশের জন্য তার বন্ধুকে অ্যাবি গেটে যেতে বলা হয়েছিল।
কিন্তু বৃহস্পতিবার সাবেক মন্ত্রী যখন তার পরিবার নিয়ে উপস্থিত হন, তখন গেটটি বন্ধ ছিল।
ইডেন তখন গেটে টহলরত মার্কিন সেনাদের ফোন করে তার বন্ধুকে সাহায্য করতে বলেন। সাবেক মন্ত্রী এবং তার পরিবার গেট থেকে ছাড়া পাওয়ার দুই মিনিটের মধ্যেই সেখানে একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়।
ইডেন বলেন, "এখানকার পরিস্থিতি খুবই বেশি খারাপ"। আমেরিকান আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে গত দুই সপ্তাহে প্রায় ১০০ জন প্রাক্তন সহকর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের আফগানিস্তান থেকে বের করে আনতে কাজ করেছেন এই মার্কিনী।
- সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস