ব্রেকিং নিউজের জন্য ‘বিগ মোমেন্টস’ ফিচার আনছে গুগল
চারপাশের পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত ঘটছে গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনা। দেশ-বিদেশের সব খবর সঙ্গে সঙ্গে জানাও বেশ সময়সাধ্য। কিন্তু, সে অসুবিধা দূর করতে 'বিগ মোমেন্টস' ফিচার নিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক জায়ান্ট- গুগল। বাস্তব জীবনে ঘটে চলা গুরুত্বপূর্ণ সকল ঘটনার তাৎক্ষনিক সংবাদ জানাতেই আসছে এ ফিচারটি।
আসলে গত এক বছরের বেশি সময় ধরেই 'বিগ মোমেন্টস' পরিষেবা নিয়ে কাজ করছে গুগল। এর মূল লক্ষ্য তাদের সংবাদ সেবাদানে বর্তমান ঘাটতি দূর করে তাৎক্ষনিক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পাঠকের সামনে তুলা ধরা।
সময়মত গুরুত্বপূর্ণ বা দরকারি সংবাদ জানতে নিজস্ব সার্ভিসের ব্যর্থতা নিয়ে গুগল কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেওয়ার পরই এ প্রজেক্ট শুরু হয়।
তাছাড়া, গুগল সার্চ ইঞ্জিনের একটি বড় পরিষেবা সংবাদ পরিবেশন। কোন ঘটনা ঘটার পরপরই সেটি কীভাবে হলো, কেন হলো ইত্যাদি প্রশ্ন জানতে গুগল সার্চেই ভরসা করেন অসংখ্য ব্যবহারকারী। অর্থাৎ, বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী একসাথে পাওয়ার একটি বড় চাহিদা রয়েছে।
অন্যদিকে, সংবাদ পরিবেশনে গুগলের প্রতিদ্বন্দ্বী টুইটার ও ফেসবুক ব্যবহারকারীরা কোন ঘটনা চলমান থাকা অবস্থাতেই সে সম্পর্কে জানতে পারে।
এ দুর্বলতা কাটিয়ে নেটিজেনদের জন্য একক সংবাদ পরিবেশনের উৎস হতে চায় সিলিকন ভ্যালির সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট। গত দিনের কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হোক বা অতি-সাম্প্রতিক কোন চলমান বিবরণ- সবকিছু একসাথে পরিবেশন করবে 'বিগ মোমেন্টস।'
নতুন কিছু আঙ্গিকও থাকবে, সুযোগমতো ব্রেকিং নিউজের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও তুলে ধরবে ফিচারটি। এতে গুগল সার্চে গণমাধ্যমের নতুন প্রতিবেদন তুলে ধরার চেয়ে ব্যতিক্রমী এক তথ্যধারা যুক্ত হবে।
যেমন- কোন সংবাদ যদি ঘুর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের হয়, তাহলে বিগ মোমেন্টস স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া ক্ষয়ক্ষতির হিসাব, হতাহতের সংখ্যার পাশাপাশি দুর্গত অঞ্চলে ঘুর্ণিঝড় কত ঘন ঘন হানা দেয়- সেটিও জানাবে।
তবে সংবাদ পরিবেশক গণমাধ্যমের সত্ত্ব লঙ্ঘন যেন না হয়, সেজন্য নিজস্ব প্রতিবেদন সাজাতে ডাটা কমন্সের মতো তথ্য ভাণ্ডারের সাহায্য নেবে গুগল ইঙ্ক। ডাটা কমন্স মার্কিন সরকারি সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্য সংগ্রহ করে, তথ্যগুলির পরিবেশক অবশ্য গুগল নিজেই।
বিগ মোমেন্টস ফিচার নতুন হলেও, এতে ব্যবহৃত মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ২০১৮ সালেই গুগল নিউজ সার্ভিসে যুক্ত করা হয়েছিল।
গুগলের পণ্য ও অনুসন্ধান অভিজ্ঞতা বিষয়ক জ্যেষ্ঠ নির্বাহী এলিজাবেথ রেইডের মতো দক্ষ কর্মকর্তা বিগ মোমেন্টস ডেভেলপার টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
১৭ বছর ধরে গুগলে আছেন রেইড। চলতি বছরের এপ্রিলে তিনি সার্চ এক্সপেরিয়েন্স বিভাগ প্রধানের দায়িত্ব নেন। এর আগে তিনি গুগল ম্যাপস, গুগল মাই বিজনেস ও অন্যান্য উপগ্রহ প্রযুক্তি নির্ভর অনলাইন পরিষেবা উদ্ভাবনের কাজে প্রকৌশলী দলের নেতৃত্ব দেন।
রিডের নিয়োগই বলছে এ প্রকল্পে অত্যন্ত গুরুত্বই দিচ্ছে গুগল।
গুগলের জন্যও উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা?
বিগ মোমেন্টস ফিচার চালু হলে, গণমাধ্যমের সম্পাদকদের যেমন প্রতিনিয়ত সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তার কাছাকাছি চলে আসবে গুগলও।
তবে মূল পার্থক্য হলো, এখানে ব্যক্তির পরিবর্তে গুগলের অ্যালগরিদম সংবাদ ও তথ্যের ব্যাপারে সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত নেবে।
কিন্তু, প্রশ্ন হলো, বার্তাকক্ষে নেওয়া জটিল সিদ্ধান্ত কী মেশিন লার্নিংয়ের পক্ষেও সূক্ষ্মভাবে অনুকরণ করা সম্ভব? সম্পাদকরা যেসব চিন্তা করে সংবাদ প্রকাশ করা বা না করার সিদ্ধান্ত নেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী তার সমকক্ষ হবে?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এক্ষেত্রে সংবাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। নানান আঙ্গিকের মেরুকরণ থাকা ঘটনায় একটি পক্ষপাতহীন দৃষ্টিভঙ্গির তথ্য সাজানোই হবে যান্ত্রিক সম্পাদনার বড় সমস্যা।
তবে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের বিরুদ্ধে কিন্তু বর্তমানেও পক্ষপাতমূলক সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগ রয়েছে। তাই নিজস্ব সংবাদ তৈরি শুরু করলে যে এমন সমালোচনা বহুগুণে বাড়বে- তাও বলা যায় নিঃসন্দেহে।
আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, দ্রুত চলমান কোন ঘটনা কাভার করা যেকোনো মানব সংবাদ কর্মীর জন্যেই মারাত্মক কঠিন একটি কাজ।
খোদ গুগলই সাম্প্রতিক কিছু সার্চ রেজাল্টের সাথে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ব্যবহারকারী যে ঘটনার সংবাদ খুঁজছেন তা এত দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে যে, সে সম্পর্কিত সকল সংবাদ অনুসন্ধানের ফলাফলে এখনও তুলে ধরা সম্ভব হয়নি।
বিগ মোমেন্টস নিয়ে এ সমস্যার বাড়বে বৈ কমবে না। এখানে মানব সম্পাদক যুক্ত করলে, তাতে সংবাদ পরিবেশনে আরও দেরী হবে। অথচ গুগলের লক্ষ্যই হলো আলোর গতিতে সংবাদ উপস্থাপন।
গুগলের একজন মুখপাত্র সম্প্রতি জানান যে, ইতোমধ্যেই সার্চ রেজাল্টে বিগ মোমেন্টস এর কিছু ফিচার ব্যবহার করা হয়েছে।
ফিচারটির কবে লঞ্চ হবে, সে তারিখ এখনও জানা যায়নি। এনিয়ে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে গুগল।
- সূত্র: সার্চ ইঞ্জিন জার্নাল