ভারতেও করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনের সংক্রমণের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া করোনভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন ভারতেও হানা দিয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভাইরাসটির নতুন এই স্ট্রেইনের শনাক্তকরণ এবং বিস্তার রোধের জন্য জিনোম-সিকোয়েন্সিং ভিত্তিক নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জিনোম সিকোয়েন্সিং হচ্ছে জিনোমিক প্রেডিকশন নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়ায় রোগ শনাক্ত করার প্রক্রিয়া।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ভাইরাসের যখন সংক্রমণ হয় তখন তার জিনগত পরিবর্তন শনাক্ত করতে সহায়তা করে জিনোম সিকোয়েন্সিং। এই সিকোয়েন্সিং বিজ্ঞানীদের ভাইরাসটির বিভিন্ন বিষয় বুঝতে সাহায্য করে। ভাইরাসটি কত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং কিভাবে এর ভ্যাকসিন তৈরি করা যেতে পারে সেটিও এর মাধ্যমে বোঝা যায়।
VUI–202012/01 নামে পরিচিত ভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন আগের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সংক্রামক। বিজ্ঞানীরা এখনও নতুন এই স্ট্রেইনের প্রভাব এবং তীব্রতা নিয়ে গবেষণা করছেন।
মহামারির মধ্যেই করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক নতুন স্ট্রেইনের প্রাদুর্ভাব নিয়ে উদ্বেগের কারণে যুক্তরাজ্য থেকে আগত ফ্লাইট আপাতত বন্ধ রাখার এবং যুক্তরাজ্য থেকে আগত যাত্রীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে ভারত।
গত মঙ্গলবার দিল্লির ৬ জন সহ মোট ২২ জনের করোনা পরীক্ষায় ফলাফল পজিটিভ হওয়ায় তাদের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে।
ইনস্টিটিউট অব জিনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজি (আইজিআইবি) এর পরিচালক ড. অনুরাগ আগরওয়াল বলেন, "ভারতে এটি পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম ,তবে মাস্ক না পরলে দ্রুতই সংক্রমণ বেড়ে যাবে ।" এটি দ্রুত সংক্রামক হলেও শুধু মাস্ক না পরলেই সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে বলে সতর্ক করেন তিনি।
আশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিবেদী স্কুল অব বায়োসায়েন্সের পরিচালক ও ভাইরাোলজিস্ট ড. শহীদ জামিল বলেছেন, "নতুন এই স্ট্রেইন ভারতেও পৌঁছে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। একারণেই আমাদের জিনোমিক সিকোয়েন্সিংয়ের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। বিশ্বের কোভিড -১৯ আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রামক তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত, এখানেও নতুন স্ট্রেইনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে এমন আশঙ্কা আছে। "
ভারতে প্রতি ৩ হাজার করোনা পজিটিভের ক্ষেত্রে একটি জিনোম সিক্যুয়েন্স করা হচ্ছে, অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি তিনশো পজিটিভ কেসে একটি জিনোম সিকুয়েন্স করা প্রয়োজন। আমাদের এই সক্ষমতা নেই এমনও নয়, শুধু এদিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার দরকার।" বলেন তিনি ।
ড. আগরওয়াল আরও বলেন, কিছু রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন-পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশনের (আরটি-পিসিআর) কিট ভাইরাস শনাক্তকরণের ভুল ফলাফল দিতে পারে।
তিনি বলেন, " ভাইরাস শনাক্ত করতে সাধারণত পিসিআর দুটি জিন ব্যবহার করে, আমরা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ার জন্য ডাবল জিন পজিটিভের ওপর জোর দিতে পারি না।"
উদ্বেগের কারণ হলো নতুন স্ট্রেইনে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনে পরিবর্তন হয়েছে। এর মাধ্যমে ভাইরাসটি মানদেহে প্রবেশ করে।
তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন তা সত্ত্বেও ভ্যাকসিনটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করবে।
ড. আগরওয়াল আরও যোগ বলেন, "এই ভ্যাকসিন অনেকগুলি অ্যান্টিবডি তৈরি করবে । ফলে কিছু অ্যান্টিবডি কাজ না করলেও বাকিগুলো করবে। এ ছাড়া এর টি-সেলের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসের কিছু অংশ পরিবর্তিত হওয়া সত্ত্বেও কাজ করবে।"
- সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস