ভারতের ভালো-মন্দ ফাঁস করে দিলেন ভ্যাকসিন-রাজপুত্র
আদর পুনাওয়ালা যেন ওষুধ খাতে ভারতের শক্তিমত্তার একটি চলন্ত বিজ্ঞাপন। দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, পুনেভিত্তিক সেরাম ইনস্টিউটের বিলিওনিয়ার মালিক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)- এই পরিচয়ের চেয়েও যেন নিজ দেশের বেসরকারি খাতের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের একটি প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি।
কোভিড-১৯ মহামারির আগে এমনকি নিজ দেশেও সেরামের অত রাজসংসার ছিল না। তালিকাবহির্ভূত এই কোম্পানি এখন করোনাভাইরাস সংকট উত্তরণে ভারতের সবচেয়ে বড় আশার জায়গা হয়ে উঠেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে কোভিড-১৯ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৮৮ জন; গোয়া রাজ্যে টেস্টের ৪০ শতাংশই পজিটিভ এসেছে।
স্থানীয়ভাবে কোভিডশিল্ড নামে পরিচিত, অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন মাসে ৭০ মিলিয়ন ডোজ পর্যন্ত উৎপাদন করে সেরাম ইনস্টিটিউট, যার মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ বিলি হয়ে গেছে।
আর এ ঘটনাই ৪০ বছর বয়সী আদর পুনাওয়ালার মানসিক যন্ত্রণার কারণ। যুক্তরাজ্যের 'দ্য টাইমস' পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন, ভ্যাকসিনের জন্য ভারতের পুঁজিপতি ও রাজনীতিকরা তাকে হুমকি দিচ্ছেন। গত শনিবার প্রকাশিত হয় সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, যদিও অল্প কিছুদিনের মধ্যে দেশে ফেরার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু এমন চাপের কারণেই আরও কিছুদিন তিনি লন্ডনে থাকতে চান। অবশ্য সাক্ষাৎকারটি প্রকাশের দিন কয়েক আগে ভারত সরকার তার নিরাপত্তার জোরাল ব্যবস্থা করেছিল।
এই সমস্যার মূলে রয়েছে নয়াদিল্লির ভ্যাকসিন সংগ্রহ কৌশল। এপ্রিলে ভ্যাকসিন ভাণ্ডারের অর্ধেক অংশ রাজ্য সরকার ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কেনার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত; যদিও এ ক্ষেত্রে সরকার যে টাকায় কেনে, তারচেয়ে দ্বিগুণ বা তারও বেশি দাম দেওয়ার অবস্থা তৈরি হয়। আর তাতে এমন একটি সীমিত সরবরাহের জীবনরক্ষাকারী ভ্যাকসিনকে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে বরাদ্দের প্রশ্নে অভাবনীয় দায় তৈরি করে। সরকার যদি কেন্দ্রীয়ভাবে বিপনন করত, তাহলে এ বিশৃঙ্খলা এড়ানো যেত।
ধনী কিছু দেশের রাজনীতিকরা আগেভাগেই প্রয়োজনের চেয়েও বেশিসংখ্যক ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়ে রেখেছেন। উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন, যেন উৎপাদনকর্ম নির্বিঘ্ন হয়। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন এ কাজে ধীরনীতি নিয়েছে, আর তা ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার পরই। এখন যেকোনো মূল্যে তাদের টিকাদান কর্মসূচী বেগবান করার চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। উদাহরণ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থায়নে কোভ্যাক্স ভ্যাকসিনের কথা ধরা যেতে পারে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে সাহায্য হিসেবে পাঠাতে যেটি উৎপাদনের জন্য বিশ্ব সংস্থাটি সেরামের দ্বারস্থ হয়েছে। ভ্যাকসিন রপ্তানির সেইসব চুক্তি এখন স্থগিত।
সবচেয়ে কম মুনাফা করার মাধ্যমে নিজেকে একজন মানবপ্রেমী হিসেবে প্রমাণিত করতে চান- আদর পুনাওয়ালাকে অবশ্য এমন ব্যক্তি বলা যাবে না। তবে নিজে আতঙ্কের মধ্যে থেকে এই মানুষ ভারতীয়দের জীবন বাঁচানোর গুরুদায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, আর দিন গুনছেন বিদেশে ভ্যাকসিন রপ্তানির অনুমতি পাওয়ার।
আদর পুনাওয়ালার বর্তমান অবস্থার দিকে তাকালে সব মিলিয়ে ভারতের ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনার এক ভয়াবহ চেহারার দেখা মেলে।
- সূত্র: রয়টার্স