ভারতে কৃষক সমাবেশে পুলিশের টিয়ার গ্যাস
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে সংঘটিত কৃষকদের বিক্ষোভ সহিংস রূপ ধারণ করেছে। পুলিশ কৃষকদের উদ্দেশ্যে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে এবং ব্যারিকেড ভাঙ্গায় লাঠিচার্জও করেছে।
আল জাজিরা জানায়, মঙ্গলবার সকালে ভারতের প্রজাতান্ত্রিক দিবস উদযাপনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের অংশ হিসেবে কৃষকরা একটি ট্র্যাক্টর সমাবেশ করার সময় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সম্প্রতি ভারতীয় পার্লামেন্টে প্রায় বিনা আলোচনায় পাস করা হয় কৃষিসংক্রান্ত তিনটি বিতর্কিত বিল। সেই থেকে রাজ্যে রাজ্যে কৃষক অসন্তোষের জন্ম। কৃষক আইনের বিরুদ্ধে ভারতের হাজারও কৃষক রাজপথে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
মঙ্গলবার আন্দোলনরত কৃষকেরা পুলিশের বাধা এবং টিয়ার গ্যাসের আক্রমণ উপেক্ষা করেই সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে মহাসড়কে তাদের পদযাত্রা অব্যাহত রাখেন। রঙিন পতাকা ও প্ল্যাকার্ড হাতে কৃষকদের কেউ ট্র্যাক্টরে, আবার কেউ পায়ে হেঁটেই শহরের উপকণ্ঠ থেকে মিছিলে যোগ দেয়।
'আমরা আত্মসমর্পণ করব না। হয় জিতব, নয়তো মরব,' প্ল্যাকার্ডে লেখা এ বাক্য থেকেই নতুন আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের আবেগের প্রতিফলন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
তাদের দাবি, নতুন এ আইন বাস্তবায়নের ফলে ভারতের বিশাল কৃষি খাতের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে বেসরকারি খাতের কাছে; যা তাদের জীবিকা ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠবে।
গত কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত নয়াদিল্লির উপকণ্ঠে সিঙ্ঘু সীমান্তে কয়েকশ পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীকে লাঠি, রাইফেল, জল কামান এবং টিয়ার গ্যাস বহন করতে দেখা যায়। আন্দোলনরত কৃষকেরা যেন প্রবেশ করতে না পারেন, সেজন্য পুলিশ রাজধানীতে ঢোকার পথ বিভিন্ন ধাতব এবং কংক্রিটের বেষ্টনি দিয়ে অবরোধ করে রাখে।
তবু কৃষকেরা অনুমতির অপেক্ষা না করেই সেখানে ঢোকার চেষ্টা করেন। পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপের ফলে এটি সংঘর্ষে রূপ নেয়।
বীরেন্দর বীর সিং (৫২) নামে একজন কৃষক আল জাজিরাকে জানান, তারা তাদের সমাবেশের জন্য পৃথক পথের আবেদন জানালেও অনুমতি দেওয়া হয়নি। 'পুলিশ আমাদের থামানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও সফল হয়নি,' তিনি বলেন।
পাঞ্জাবের অমৃতসরের আরেকজন কৃষক গুরবাচান সিং (৭৩) জানান, তিনি এই শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করেই পুরো রাত ট্রাক্টরে কাটিয়েছেন, যেন সকালে সমাবেশে যোগ দিতে পারেন।
'তারা এসব আইন প্রণয়ন করেছে এবং আমরা এগুলো বাতিল করব,' বলেন তিনি।
অশীতিপর ওই কৃষক আরও জানান, এই ট্র্যাক্টর সমাবেশ তাদের একাত্মতা এবং শক্তির পরিচায়ক। 'আমি আমার বয়স নিয়ে ভাবছি না এবং এই সমাবেশে আহত হওয়া কিংবা চোট পাওয়া নিয়ে আমার কোনো ভয় নেই,' বলেন গুরবাচান।
পাঞ্জাবের তরণ তারণ জেলার গোয়িন্দওয়াল থেকে আসা গুরজন্ত সিং গত ১০ দিন ধরে সিঙ্ঘু সীমান্তে বিক্ষোভ স্থানে কাটিয়েছেন।
তিনি বলেন, "আমরা তখনই ফিরব যখন এ আইন ফিরিয়ে নেয়া হবে"। তার মতে এ আইনের ফলে তিনি জমি এবং জীবিকার উপায় উভয়ই হারাবেন।
"আর্থিক সংকটের সময় আমরা কমিশন এজেন্টদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করে থাকি। আমরা গভীর রাতে সাহায্যের জন্য গেলেও তারা আমাদের ফিরিয়ে দেবে না। কিন্তু বড় বড় কর্পোরেটরা কি তা করবেন?"
গুরজন্ত সিং বলেন, "আমরা যদি এ আইন না চাই, তবে সরকার কেন তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে? এসব আইন কৃষকদের সাথে পরামর্শের পর তাদের সম্মতি নিয়ে পাস করানো উচিত, তা না করে আমাদের ওপর রীতিমত আরোপ করা হচ্ছে।"
এ পর্যন্ত সরকার এবং কৃষক ইউনিয়নের মধ্যে কয়েক দফা মধ্যস্ততার চেষ্টা করা হলেও সেসব ব্যর্থ হয়েছে। ১৮ মাসের জন্য সরকার আইনটি স্থগিতের যে প্রস্তাব দিয়েছিল সেটিরও বিরোধিতা করেছে কৃষকেরা।
সূত্র: আল জাজিরা