ভারতে জরুরি অনুমোদনের সুপারিশ পাওয়া স্পুটনিক ভ্যাকসিন কতোটা কার্যকর?
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিবেশী ভারতে। জাতীয় টিকা কর্মসূচিতেও ডোজ সঙ্কটের অভিযোগ করেছে বেশকিছু রাজ্য। আর তাই অনুমোদিত ভ্যাকসিনের সংখ্যা বাড়িয়ে ডোজের সমস্যা দূর করতে চাইছে দেশটি।
এ অবস্থায় রাশিয়ার তৈরি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে ভারতে জরুরী ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিতে সুপারিশ করেছে দেশটির একটি বিশেষজ্ঞ কর্তৃপক্ষ। আজ সোমবার (১২ এপ্রিল) এই সুপারিশের কথা স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়।
বার্তা সংস্থা এএনআই জানায়, দেশটির সাবজেক্ট এক্সপার্ট কমিটি রুশ ভ্যাকসিনটির অনুমোদনের জন্য স্থানীয় ফার্মাসিটিক্যাল জায়ান্ট ড. রেড্ডিজ ল্যাবরেটরিজের আবেদন পর্যালোচনা করে জরুরী অনুমোদন দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এখন ভারতের ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেলেই বাজারজাতকরণের আনুষ্ঠানিক বাধা দূর হবে।
এপর্যন্ত ভারতে জরুরী অনুমোদন পেয়েছে দুটি টিকা- স্থানীয় কোম্পানি ভারত বায়োটেক আবিষ্কৃত কোভ্যাক্সিন এবং অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকা আবিষ্কৃত টিকা, যা কোভিশিল্ড নামে বাজারজাত করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া।
স্পুটনিক ফাইভ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় এখানে তুলে ধরা হলো;
স্পুটনিক ফাইভ কীভাবে কাজ করে?
রাশিয়ার গামালিয়া ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি এর আবিষ্কারক। রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পাওয়ার পর এটি বিশ্বের প্রথম নিবন্ধিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন হয়ে ওঠে। টিকাটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে সুপ্রচলিত জৈবপ্রযুক্তি হিউম্যান অ্যাডনোভাইরাল ভেক্টর প্লাটফর্ম।
সেরাম উৎপাদিত অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা কোভিশিল্ডেও একই প্রযুক্তির ব্যবহৃত হয়েছে।
সংক্রমণ রোধে কতখানি কার্যকর?
টিকাটি ৯১.৬ শতাংশ কার্যকর বলে জানিয়েছে এর আবিষ্কারক সংস্থা।
উৎপাদন কোথায় হচ্ছে?
টিকাটির মূল স্বত্ব রুশ সরকারের, কারণ এর গবেষণায় মূল বিনিয়োগকারী ছিল দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ তহবিল (আরডিআইএফ)। সংস্থাটি ড. রেড্ডিজ ল্যাবরেটরি, হেটেরিও বায়োফার্মা, গ্লান্ড ফার্মা, স্টেলিস বায়োফার্মা এবং ভিখ্রো বায়োটেক-সহ একাধিক ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে উৎপাদনের চুক্তি করেছে। এসব কোম্পানি মিলিতভাবে বার্ষিক ৮৫ কোটি ডোজ উৎপাদন করতে পারবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। দেশটির জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশা, এর ফলে জাতীয় টিকা কর্মসুচিতে ডোজ সঙ্কটের অবসান ঘটবে।
কয়টি ডোজ নিতে হয়?
দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকর সুরক্ষার জন্য টিকাটির দুটি করে ডোজ নিতে হবে।
বাজারমূল্য কত হতে পারে?
বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়, তবে এর আগে আরডিআইএফ জানিয়েছিল, তারা ডোজপ্রতি মূল্য ১০ ডলারের নিচে রাখতে চায়, যা ভারতীয় মুদ্রার অঙ্কে ৭৪০ রুপি পড়বে।
এই মূল্য ফাইজার বা মডার্নার তৈরি টিকার চেয়ে সস্তা হলেও সেরামের কোভিশিল্ডের চেয়ে বেশ দামি। সেরাম বর্তমানে প্রতি ডোজ ২০০ রুপিতে বিক্রি করছে ভারত সরকারের কাছে। অন্যদিকে, ভারত বায়োটেক কোভ্যাক্সিন দিচ্ছে ২৯৫ রুপিতে।
কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়?
"মানব ট্রায়ালে কোনো প্রকার বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি," বলে গেল বছরের ২০ নভেম্বর দাবি করে এটির আবিষ্কারক সংস্থা।
তবে টিকাগ্রহীতারা স্বল্পস্থায়ী কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন জ্বর, দুর্বলতা, অবসাদ এবং মাথাব্যথা অনুভব করতে পারেন।
সংরক্ষণ প্রক্রিয়া কেমন?
দুই থেকে আট ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এর ডোজগুলো সংরক্ষণ করা যায়, বলে গামালিয়া ইনস্টিটিউটের গবেষকরা জানিয়েছেন।
- সূত্র: দ্য কুইন্ট