মহামারির মধ্যেই কুম্ভমেলায় যোগ দিতে গঙ্গায় লাখো লোকের ভিড়
জীবন ও মৃত্যুর চিরন্তন চক্র থেকে মুক্তির কামনা জানাতে প্রতিবছর গঙ্গা নদীতে আসেন ১ কোটিরও বেশি হিন্দু তীর্থযাত্রী; গঙ্গার পবিত্র জলে ধুয়ে ফেলেন পাপ।
এ উৎসবের দিনে গঙ্গার পবিত্র জলে নিজেদের পাপ মোচনের মাধ্যমে ভক্তরা 'অমৃত' বা 'মোক্ষ' লাভের আশা করেন- এটি লাভে জীবন ও মৃত্যুচক্র থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করা হয়।
মহামারির মধ্যেও এ বছর তার ব্যত্যয় ঘটেনি। সামাজিক দূরত্বের কোন বালাই না রেখেই সোমবার উত্তর ভারতের হরিদ্বারের রাস্তায় কুম্ভমেলার উদ্দেশ্যে ভিড় জমিয়েছেন তীর্থযাত্রীরা।
পৃথিবীর বৃহত্তম তীর্থযাত্রা ভারতের এই কুম্ভমেলায় যোগ দিতে গতকাল প্রায় ৫০ লাখ তীর্থযাত্রী জড়ো হন। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ বছর মেলার আয়োজনে বিলম্ব ঘটেছে।
হরিদ্বারের পুলিশ পরিদর্শক সঞ্জয় গুঞ্জল জানিয়েছেন, সোমবার দিনের প্রথম ভাগে অন্তত সাড়ে ছয়লাখ লোক গঙ্গায় শুচিস্নানে অংশ নিয়েছেন। মুকেশ ঠাকুর নামক আরেকজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নদীর ১৫টি তীর জুড়ে দিনের প্রতিভাগে ১১ হাজার থেকে ১৮ হাজার লোক পানিতে ছিল।
ভারতে চলছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ, প্রতিদিন যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এ অবস্থায় এত বিপুল পরিমাণ মানুষের ভিড় সংক্রমণের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে।
তীর্থযাত্রীরা মাস্ক ছাড়া জড়ো হলে এবং একসঙ্গে গোসলে নামলে কোভিড-১৯ মহামারি গণহারে বিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে- এমন সতর্কবার্তা আগেই প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ।
গুঞ্জল বলেন, "সামাজিক দূরত্ব একেবারেই মানা হচ্ছে না। আমরা যদি এ অবস্থায় কোন পদক্ষেপ নিতে যাই, তাহলে ভিড় থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পদদলিতের মত ঘটনাও ঘটতে পারে। ফলে আমরা চাইলেও নদীতীরে সামাজিক দূরত্ব কার্যকরের জন্য কোন ব্যবস্থা নিতে পারছি না"।
কর্তৃপক্ষ যথাসম্ভব মানুষকে মাস্ক পরা এবং কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ মেনে চলার আহবান জানিয়ে আসছে বলেও এই পুলিশ কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার টানা ষষ্ঠ দিনের মত ভারতে সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশটিতে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯১২ জন।
কুম্ভমেলার আয়োজন চলবে পুরো মাসজুড়েই। ফলে উত্তরাখণ্ড রাজ্যের হরিদ্বারে কর্তৃপক্ষ করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
নদীর তীরগুলোতে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণ পরিচালনার জন্য ১৫,০০০ নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন রয়েছে।
মুকেশ ঠাকুর বলেন, "ক্যামেরায় এমন সেন্সর রয়েছে যা পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গেলেই তা আমাদের সংকেত পাঠাবে। ফলে আমরা ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পারব"।
"তাছাড়া লোকে মাস্ক পরিধান করেছে কিনা সেটিও এ ক্যামেরা শনাক্ত করতে পারবে, আমরা তখন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব"।
উৎসব শুরুর আগেই অবশ্য ভাইরাসের বিস্তার রোধে আগত তীর্থযাত্রীদের জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করা হয়।
হরিদ্বারে প্রবেশের আগে, উৎসবে অংশ নেওয়া সবাইকে অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হয় এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা নিশ্চিত করে একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট সরবরাহ করতে হয়। অন্যান্য রাজ্য থেকে আগত প্রত্যেককে করোনা নেগেটিভ পরীক্ষার সনদ দেখাতে হয়; এছাড়া আগত যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার জন্য ট্রান্সপোর্ট হাবগুলোতে একাধিক চেকপয়েন্ট স্থাপন করা হয়।
তবে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে শুধু এটুকুই যথেষ্ট নয়। সোমবারে অবধারিতভাবে পুলিশ ভিড় নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে অক্ষম হয়। ক্যামেরায় প্রদর্শিত ছবিতে দেখা যায়, অনেকেই মাস্ক পরেন নি।
ফলে বাকি দিনগুলোতে মেলা চলাকালীন কতটা নিবিড়ভাবে করোনাভাইরাস বিধি অনুসরণ করা হবে সে প্রশ্ন রয়েই যায়; সামাজিক দূরত্ব না রেখে একই স্থানে লাখ লাখ লোক দিনের পর দিন খাওয়াদাওয়া সারবেন, নদীতে নেমে গোসল করবেন, প্রার্থনা করবেন!
এদিকে উত্তরাখণ্ড রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুসারে, গত এপ্রিল শুরু হওয়া মাসব্যাপী এই আয়োজনের পর থেকে রাজ্যে ২,২০৯ জনের নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
- সূত্র: সিএনএন