মা-বাবার সঙ্গে অ্যারিজোনায় নিরাপদে সেই আফগান শিশু
কাবুল বিমানবন্দরে কাঁটাতারের উপর দিয়ে এক আফগান শিশুকে মার্কিন সেনাদের হাতে তুলে দেওয়ার একটি ছবি এ বছরের আগস্টে ইন্টারনেটে বেশ সাড়া জাগায়। শিশুটিকে সেসময়ই তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
আমেরিকান সেনার সহায়তায় সেদিন আফগানিস্তান ছেড়ে পালাতে পেরেছিল শিশুটির পরিবার। বর্তমানে তারা রয়েছে আমেরিকার অ্যারিজোনায়।
শিশুটির বাবা হামিদ পেশায় একজন দোভাষী। আমেরিকান সেনাবাহিনীর হয়ে দোভাষীর কাজ করতেন তিনি। তালেবান আফগানিস্তান দখলের পর আফগান এবং মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারকাজে আমেরিকাকে সাহায্য করছিলেন হামিদ।
উদ্ধারকাজ চলাকালীন সময়ে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তার স্ত্রী। মেয়ে হওয়ার সময়েও স্ত্রীর পাশে থাকতে পারেননি হামিদ।
এদিকে, কাজ করতে থাকা অবস্থায়ই হামিদ জানতে পারেন, আমেরিকাকে সাহায্যকারী ব্যক্তিদেরকে একে একে হত্যা করছে তালেবান। বিপদ টের পেয়ে সদ্যজাত কন্যাকে নিয়ে তার স্ত্রীকে বিমানবন্দরে চলে আসতে বলেন হামিদ। কিন্তু বিমানবন্দরে হাজারো মানুষের ভিড় থাকায় সেখানে ঢোকার উপায় ছিল না।
আরও পড়ুন- কাঁটাতার পেরিয়ে মার্কিন বাহিনীর হাতে দেওয়া আফগান শিশুটিকে বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে: পেন্টাগন
নিজের সন্তানকে বাঁচাতে আমেরিকান সেনাবাহিনীর কাছে সাহায্য চান হামিদ। এক সেনা বলেন, শিশুটিকে যদি একটু উপরের দিকে তুলে ধরা হয়, তিনি পাঁচিলের অপর পাশ থেকে তিনি তাকে টেনে নেবেন। কিন্তু তাতে কাঁটাতারে জখম হওয়ার আশঙ্কা ছিল প্রবল। হামিদ বলেন, "নিশ্চিত মৃত্যুর কাছে জখম হওয়া আর কী!" পরে ওই উপায়েই উদ্ধার হয় শিশুটি। মানবাধিকার কর্মী ওমর হায়দারির করা এই ভিডিওতে, কান্নারত শিশুটিকে একটি কাঁটাতারের প্রাচীরের উপর দিয়ে একজন মার্কিন মেরিনের কাছে তুলে দিতে দেখা যায়।
গত পাঁচ বছর ধরে ইউএস মেরিন-এর সঙ্গে কাজ করছিলেন হামিদ। একটি আমেরিকান টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "গোয়েন্দা মারফত খবর পাচ্ছিলাম, এক-এক করে আফগানদেরকে ধরে মারছে তালেবান। যেহেতু আমেরিকান সেনার সঙ্গে আমি কাজ করছি, আমি জানতাম, এরপর আমার পরিবার ওদের নিশানায় আসবে। শুধু প্রশ্ন ছিল, 'কবে আসবে ওরা'-ওরা আসার আগেই কিছু করতে হবে আমায়।"
এক আমেরিকান 'মেরিন'-এর হাত ধরে প্রাণ বেঁচেছিল হামিদের মেয়ের। আট সপ্তাহ বয়সী কন্যার মাঝের নামটি তাই 'মেরিন' রেখেছেন তিনি।
- সূত্র-আনন্দবাজার