মিয়ানমারে প্রধান শহরগুলোতে আংশিক সামরিক আইন জারি, রক্তাক্ত দিনে নিহত ৩৯
মিয়ানমারের শিল্প এলাকা বলে পরিচিত হ্লাইংথায়ায় জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে সেনা-পুলিশের গুলিতে রবিবার (১৪ মার্চ) কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন।
এছাড়া দেশটির অন্যান্য শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন ১৬ জন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন পুলিশ সদস্যও প্রাণ হারিয়েছেন। অ্যাডভোকেসি গ্রুপ অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এটি নিশ্চিত করে।
পহেলা ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থান শুরুর পর এদিনই সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন পার করল দেশটি।
এদিকে চীনা দূতাবাস জানায়, হ্লাইংথায়ায় কয়েকটি চীনা কারখানায় অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারীরা অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছে। এ হামলায় অনেক চীনা শ্রমিক আহত হয়েছেন এবং কারখানার ভেতর আটকা পড়েছেন। তাদের নিরাপত্তা ও চীনের সম্পদ রক্ষার আহবান জানায় দূতাবাস।
চীনা-অর্থায়িত কারখানায় হামলার পর দূতাবাস এ পরিস্থিতিকে 'অত্যন্ত মারাত্মক' হিসেবে আখ্যায়িত করে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়, "সর্বপ্রকার সহিংসতা বন্ধ করতে, আইন অনুসারে অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে এবং চীনা কোম্পানি ও শ্রমিকদের জীবন ও সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চীন মায়ানমারের প্রতি আহবান জানাচ্ছে"।
কারখানার আগুনের ঘটনায় কোন দল এখন পর্যন্ত দায় স্বীকার করে নি।
এদিকে বিবৃতি প্রকাশের পরপরই চীনা দূতাবাসের ফেসবুক পেজ মিয়ানমারের ভাষায় লেখা নেতিবাচক মন্তব্যে ভরে ওঠে।
মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানে চীনের সমর্থন রয়েছে বলে ভাবা হয়। ফলে মিয়ানমারে চীনের প্রতি বিরোধিতা বেড়ে গেছে সম্প্রতি।
বিক্ষোভকারীদের নেত্রী আই থিনজার মাং ফেসবুকে পোস্ট করে জানিয়েছেন, 'এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি কারখানা পুড়েছে'।
তিনি বলেন, "যদি আপনারা মিয়ানমারে ব্যবসা চালিয়ে যেতে চান, তাহলে আগে দেশটির মানুষের শ্রদ্ধা আদায় করতে শিখুন"।
যদিও জান্তাশাসিত মীরাবতী টেলিভিশন জানিয়েছে, হ্লাইংথায়ায় চারটি গার্মেন্টস কারখানা ও একটি সার কারখানায় আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যেতে চাইলে প্রায় দুই হাজার বিক্ষোভকারী পথ আটকে দাঁড়ায়।
পরে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে হ্লাইংথায়াসহ ইয়াঙ্গুনের দুটি এলাকায় সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেয়া হয়।
সেনাবাহিনী কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত এবং বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় সংসদের একজন প্রতিনিধি, ডাক্তার সাসা হ্লাইংথায়ার জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
এক বার্তায় তিনি বলেন, "দুষ্কৃতকারী, আক্রমণকারী, মিয়ানমারের গণমানুষের শত্রু- এই অশুভ স্টেট এডমিনিস্ট্রাটিভ কাউন্সিলকে প্রতিফোঁটা রক্তের দায় নিতে হবে"।
এএপিপি এর মতে, রবিবারের পর নিহত বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৬ জনে। এছাড়া শনিবার পর্যন্ত ২,১৫০ জনকে আটক করা হয়েছে, এখন পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে ৩০০ জনের মত।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন আলোকচিত্রী বলেন, "এটা ভয়ঙ্কর। আমার চোখের সামনে বিক্ষোভকারীদের গুলি করা হয়। আমি কখনো এই দৃশ্য ভুলতে পারব না"।
রয়টার্স অবলম্বনে