যুক্তরাজ্যে নতুন আরেক করোনাভাইরাসের সন্ধান, সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে হু’
যুক্তরাজ্যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে নতুন করোনাভাইরাস থেকে অভিযোজিত আরেকটি জীবাণু। এসম্পর্কে জানতে, ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) কর্মকর্তারা।
বিশ্বের কিছু দেশ যখন কোভিড-১৯ টিকার মুখ দেখেছে ঠিক তখনই জীবাণুর নতুনতম উৎপাত সম্পর্কে জানা গেল। এটি বেশ দ্রুতগতিতেই ছড়াচ্ছে, তবে আগেরটির চেয়ে এটি বেশি প্রাণঘাতী নয় বলেই আশ্বস্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি অভিযোজিত জীবাণুর সংস্করণটি নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রেলিয়াতেও শনাক্ত করা হয়েছে বলে হু' সূত্রে জানতে পারে বিবিসি। তবে ভরসার কথা হলো, অভিযোজিত জীবাণুটি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এপর্যন্ত আবিষ্কৃত টিকাগুলোর বিরুদ্ধে ভিন্নভাবে কাজ করে এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি।
তবে বিজ্ঞানীরা কিছুটা ভরসার কথা শোনালেও সতর্কতায় বিন্দুমাত্র ঢিল দেয়নি কর্তৃপক্ষ। নতুন জীবাণুর বিস্তার রোধে ইতোমধ্যেই লন্ডনসহ দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বিশাল অঞ্চলে নতুন করে চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। সকলেই যেন স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলে তা নিশ্চিতে চলছে কঠোর নজরদারি।
আজ রোববার (২০ ডিসেম্বর) নেদারল্যান্ডস যুক্তরাজ্য থেকে আসা সকল যাত্রীবাহী ফ্লাইট অবতরণে নিষেধাজ্ঞা দেয়। আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত সাময়িক এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে মেয়াদ আরও বাড়তে পারে। জীবাণুর নতুন সংস্করণটির বিস্তার রোধেই দেশটি এ সিদ্ধান্ত নেয়।
ইতোপূর্বে নেদারল্যান্ডসে করা পরীক্ষায় দেখা যায়, যুক্তরাজ্যে প্রথমে পাওয়া নতুন ধরনটিই সেদেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এই অবস্থায় জীবাণুর নয়া ধরন সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের প্রতি আরও তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ডাচ সরকার। 'নেদারল্যান্ডে এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে সম্ভাব্য সকল প্রকার পদক্ষেপ নেওয়া হবে,' বলেও জানানো হয়।
যুক্তরাজ্য থেকে ছড়ানো নতুন স্ট্রেইনের বিস্তার রোধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে দেশটির প্রশাসন।
এই প্রেক্ষিতে বিবিসি'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হু'র সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ভ্যান কার্কহোভ বলেন, মহামারির শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞরা নানা দেশে করোনাভাইরাসের চলমান অভিযোজনের উপর নজর রেখেছেন।
নতুন জীবাণু সম্পর্কে কী জানা গেছে?
হু' জানিয়েছে বিস্তারিত তথ্যের জন্য তারা ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তারা জানান, চলমান গবেষণা থেকে যুক্তরাজ্য জীবাণুর অভিযোজন সম্পর্কে তথ্য জানাচ্ছে। এসব তথ্য অচিরেই সদস্য দেশগুলোকে জানাবে হু। জীবাণুটির বৈশিষ্ট্য ও ঝুঁকি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া মাত্রই সেসম্পর্কে জন-সাধারণকে সতর্ক করার কথাও জানিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, নতুন ভাইরাসটি আগেরটির চাইতে ৭০গুণ বেশি সংক্রামক। ফলে মহামারী কাটিয়ে ওঠার আশায় 'ব্যাপক অনিশ্চয়তা' দেখা দিয়েছে।
তবে দেশটির গণস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, এতে মৃত্যুহার বৃদ্ধির মতো কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি বাজারে আসা টিকাগুলো এটি মোকাবিলায় নিষ্ক্রিয় হবে এমন প্রমাণও মেলেনি।
ইংল্যান্ডের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা অধ্যাপক ক্রিস হুইট্টি বলেন, 'এই পরিস্থিতি পুরো মহামারীকে বিপজ্জনক অবস্থায় নিতে সক্ষম। কিন্তু, টিকা আসার কারণে আমরা অনেকখানি আশাবাদী। টিকা যদি নতুন জীবাণুর বিরুদ্ধেও কাজ করে তাহলেই সে আস্থা সম্ভব। মূলত, সেই আশা নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।'
ভ্যান কার্কহোভ জানান, করোনার নানা অভিযোজন সম্পর্কে আমরা শুরু থেকেই সতর্ক আছি, যাতে করে এর মাধ্যমে জীবাণুর জীবনচক্র বা সংক্রমণের সক্ষমতায় কী পরিবর্তন আসছে- সে সম্পর্কে জানা যায়।
- সূত্র: বিবিসি