যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমা বিশ্বে
যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিস নগর কাউন্সিলের ৯জন সদস্যের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিদল স্থানীয় পুলিশ বিভাগ ভেঙ্গে দেওয়ার পক্ষে সম্মতি দিয়েছে। গতকাল রোববার নেওয়া এই সিদ্ধান্তে সংখ্যাগরিষ্ঠ পৌর প্রতিনিধির সম্মতি থাকায়, এটিকে ভেটো দেওয়ার মাধ্যমেও বাতিল করা যাবে না। অর্থাৎ, প্রায় নিশ্চিতভাবেই তালা ঝুলতে চলেছে নগরীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর দপ্তরে।
বর্ণবাদী নির্যাতনে স্থানীয় পুলিশের দীর্ঘদিন ধরে জড়িত থাকার অভিযোগ, জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার পর নতুন গতি লাভ করে। এ অবস্থায় নগর কর্তৃপক্ষের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ নিয়েও তীব্র প্রতিবাদ করছে বিক্ষোভকারীরা।
এ প্রেক্ষিতেই পুরোনো পুলিশ বিভাগ ভেঙ্গে বর্ণবাদী মনোভাবে দুষ্ট নয়, এমন একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৈরি করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে নগর কাউন্সিল।
নিজদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কাউন্সিলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নগরীর বর্তমান পুলিশ বিভাগকে সংস্কার করা সম্ভব নয়, তাই এটি ধীরেধীরে পুরোপুরি ভেঙ্গে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নগরীর ঘাসে আচ্ছাদিত এক ময়দানে ঘোষণাটি দেওয়ার সময় সেখানে উপস্থিত ছিল হাজারো মানুষ। উপস্থিত সকলে হাততালি এবং হর্ষধবনির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
নগর কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্ত আন্দোলনকারীদের জন্য একটি বড় জয়। দীর্ঘ দিন ধরেই তারা বর্তমান পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কার সম্ভব নয় বলে দাবি করে আসছিলেন। বর্তমান প্রতিশ্রুতির ফলে মিনিয়াপোলিস শহরে সকল বর্ণের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলেও তারা আশা প্রকাশ করেছেন।
কৃষ্ণাঙ্গ অধিকারগোষ্ঠী ব্ল্যাক ভিশনের পরিচালক ক্যানডেস মন্টেগোমারি বলেন, 'অসংখ্য জীবন ঝরে পড়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, অথচ কারো মৃত্যু হওয়ার আগেই এমনটি করা প্রয়োজন ছিল।'
নগরীতে আয়োজিত এক র্যালীতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেছেন। এসময় তিনি আরও বলেন, সশস্ত্র এবং জবাবদিহিতাবিহীন পুলিশের টহল না থাকলেই বরং আমরা বেশি নিরাপদ বোধ করব। রাষ্ট্র দ্বারা সমর্থিত এই গুণ্ডাবাহিনীর কাজই হলো; কালো মানুষদের লক্ষ্য করে সহিংসতা পরিচালনা করা।
যুক্তরাষ্ট্রে গতপরশু শনিবার রেকর্ড সংখ্যক জনতার ঢল নামে চলমান আন্দোলনে যোগ দিতে। তবে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে বর্ণবাদের গভীর সামাজিক ঐতিহ্য থাকা পশ্চিমা দুনিয়ার অন্যান্য দেশেও।
গতকাল লন্ডনে আয়োজিত এমনই এক প্রতিবাদ সমাবেশ পুলিশি বাঁধার মুখে পড়ে, দুই পক্ষের মাঝে সহিংস সংঘর্ষে রুপ নেয়।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ডাউনিং স্ট্রিটের কাছে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত। এসময় লন্ডন পুলিশের সদস্যদের; ধাক্কা দিয়ে, ব্যাটনের আঘাত করে এবং কখনোবা ঘুসি মেরেও বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে দেখা গেছে।
মিছিল নিয়ে সামনের দিকে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের লাইনে কাছকাছি আসা মাত্রই এমন আচরণের সম্মুখীন হয় প্রতিবাদী জনতা। পুলিশের বাঁধার মুখে বিচ্ছিন্নভাবে পার্লামেন্ট স্কয়ার, হোয়াইট হল এবং ডাউনিং স্ট্রিটে তিনটি অংশে অবস্থান করে আন্দোলনকারীরা। এসময় অনেককেই পুলিশের মারপিট থেকে বাঁচতে দেওয়াল ডিঙাতে দেখা গেছে।
যুক্তরাজ্যের অপর শহর ব্রিস্টলে স্থাপিত এক দাস ব্যবসায়ীর মূর্তি ভেঙ্গে ফেলে জনতা।
লন্ডন ছাড়াও রোববার রোম, মাদ্রিদ, ওয়ারশ, সিডনি, হংকংসহ বিশ্বের নানা শহরে বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসব শহরের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ নেমে এসে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংগঠিত বর্ণবাদের অবসান দাবি করে।
মাদ্রিদের মার্কিন দূতাবাসের সামনে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সকাল ১১টায় মার্কিন দূতাবাসের সামনে এক বর্ণবাদ বিরোধী র্যালির আয়োজন করা হয়। সেখানে স্পেনের রাজধানীর হাজার হাজার অধিবাসী অংশ নিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিশ নগরে গ্রেপ্তারের পর ঘাড়ে হাঁটু গেড়ে চাপ দিয়ে জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যা করে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ।
সেই বর্বরতাকে অনুভব করতেই স্পেনের বর্ণবাদ বিরোধী র্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা এক পর্যায়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন। এসময় তারা বলতে থাকেন 'আই কান্ট ব্রিদ' বা আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা। মৃত্যুর আগে ১০ মিনিট ধরে জর্জ ফ্লয়েডও এই একই আকুতি করেছিলেন। কিন্তু, তাতেও নিষ্ঠুরতা কমেনি হত্যাকারীদের।
মাটিতে শুয়ে জর্জ ফ্লয়েডের অন্তিম মুহূর্তের কথা ভেবে এসময় অনেকের চোখ অশ্রু চলে আসে। এদেরই একজন মাদ্রিদভিত্তিক কৃষ্ণাঙ্গ মডেল ডে লা ক্রুজ।
তিনি বলেন, জর্জ ফ্লয়েডের সঙ্গে হওয়া বৈষম্য ও নির্যাতনকে আমি অন্তরে অনুভব করেছি। এটা আমাকে ব্যথিত করেছে। ঈশ্বর জানেন, এই নিষ্ঠুরতা ফ্লয়েডের প্রাপ্য ছিল না।