লকডাউন নিয়ে চাপে মোদি
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতে প্রতিদিনই সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। দৈনিক আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় চার লাখ মানুষ। এমন অবস্থায় দেশটির রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক মহল থেকেও দেশজুড়ে সর্বাত্মক লকডাউন দেওয়ার জন্য চাপ আসছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপর।
মহামারির পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হয়েছেন ভারতে, আকস্মিক জোয়ারের মতো রোগীর ভিড়ে ভেঙ্গে পড়েছে দেশটির স্বাস্থ্য সেবার অবকাঠামো। প্রতিনিয়ত কোনো না হাসপাতালে হয় অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ায়, নয়তো ওষুধের অভাবে রোগী মৃত্যুর খবর আসছে।
মোদি সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় সরকারের নেতারা দাবি করেছেন, দেশে করোনা বিপর্যয়ের কারণ রাজ্য সরকারের গাফিলতি ও আঞ্চলিক পর্যায়ে লকডাউন আরোপ না করা। গেল সপ্তাহেই ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বলেন, অক্সিজেনের ঘাটতি আসলে এর বন্টন সংক্রান্ত অব্যবস্থাপনার জন্য হয়েছে যা রাজ্য সরকারগুলোর দায়িত্বের মধ্যে ছিল।
কিন্তু ভারতের বহু মানুষের বিশ্বাস, মোদি এবং তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের নানা কর্মকান্ডের ফলে ভারতে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, বরং হিন্দু ধর্মের নানা উৎসব ও রাজনৈতিক মিছিলের মাধ্যমে বহু লোক জড়ো করে করোনা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তোলা হয়েছে।
বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জেনারেল সেক্রেটারি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র বলেছেন, 'এই সরকার দেশের সবার আশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি যারা বিরোধী দলে রয়েছেন তারাও মোদি সরকারের মত নেতৃত্ব ও দেশ পরিচালনায় এতটা ব্যর্থতার কথা ভাবতে পারেননি'।
ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, গতবছর করোনার প্রথম ঢেউয়ে যখন কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই দেশজুড়ে লকডাউন দেওয়া হয়েছিল, তখন দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের অভিবাসী শ্রমিকদের পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দেওয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।
তবে প্রধানমন্ত্রী মোদি আবারও এই ধরণের বিতর্কে পড়ে নারাজ বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষকরা।
স্ট্যানফোর্ড মেডিসিন ইন ক্যালিফোর্নিয়ার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ক্যাথরিন ব্লিশ ব্লুমবার্গকে বলেন, "এক্ষেত্রে একটা সমস্যা হলো, লকডাউন বিষয়ে একটি প্রচলিত ভুল ব্যাখা। এই ব্যাখা যারা দেন তারা বলেন, পুরোপুরি লকডাউন দিলে অর্থনীতির ক্ষতি হবে আর লকডাউন না দিলে জনস্বাস্থ্যে দুর্যোগ নামবে।"
তিনি বলেন, "ভারতে এখন যেটা চলতে তা স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি দুই খাতেই দুর্যোগ। আপনার দেশের বিশাল সংখ্যক মানুষ যদি অসুস্থ হয়েই যায় তাহলে সেটি তো জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি কোনোটির জন্যই ভালো না।"
গত এক সপ্তাহে, ভারতের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোতে কেবল শশ্মানে মৃতদেহ সৎকার ও অক্সিজেনের জন্য মানুষের হাহাকারের ছবি ও ভিডিও দেখা গেছে। প্রতিদিনই মরেছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ।
ভারতের ধনীতম ব্যাংকার উদয় কোটক সরকারকে 'দুর্দশা কমাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমাতে কঠোর জাতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ' করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, "এ বিষয়ে ভারত এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আমাদের অবশ্যই শোনা উচিত।"