সংস্কার বিরোধী অবস্থান নিল মার্কিন পুলিশ ইউনিয়ন
যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের শিখা ছড়ায় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে। জনগণের নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতেই নিরাপরাধ মানুষের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধে পুলিশ বাহিনী সংস্কারের জোরালো দাবি উঠছে হাজারো জনতার সমাবেশগুল থেকে। এই অবস্থায় নিজেদের রক্ষায় সংস্কার বিরোধী অবস্থানে গাঁটছড়া বেঁধেছে দেশটির প্রভাবশালী পুলিশ ইউনিয়ন সমূহ।
গতকাল সোমবার থেকে পুলিশ ও জনতার এই বিপরীতমুখী অবস্থান নতুন উচ্চতা লাভ করে। এদিন বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন চলাকালে এক কলেজ ছাত্রকে পেটানোর দায়ে অভিযুক্ত- এক স্টাফ ইন্সপেক্টরের স্বপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ফিলাডেলফিয়া পুলিশের কর্মকর্তারা। খবর সিএনএনের।
অভিযুক্ত ইন্সপেক্টরের নাম জোসেফ বোলোগনা। গতকাল সোমবার তার পক্ষে সমর্থন জানাতে ফিলাডেলফিয়ার পুলিশ ইউনিয়নের সদর দপ্তরের সামনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় পুলিশের শতাধিক সদস্য।
কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনার মানে, প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত নির্দোষ। কিন্তু, মার্কিন পুলিশের আলোচিত সদস্যরা আদালতের আগেই নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। পুলিশের এহেন জনমত বিরোধী অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটির গণমাধ্যম।
বোলোগনা আন্দোলনকারী লাঠিপেটা ওই ছাত্রকে হাসপাতালে পাঠালেও, তার সমর্থনে জোর হাততালি দিয়েছেন উপস্থিত পুলিশ ইউনিয়ন কর্মীরা।
এই সমাবেশের পরই বোলোগনার পক্ষে অবস্থান নেওয়া ইউনিয়নটি এক বিবৃতি দেয়। সেখানে বলা হয়, ইনস্পেক্টর বোলোগনাকে এভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে রেলগাড়ির নিচে ঠেলে দেওয়া দেখে আমরা নিশ্চুপ বসে থাকতে পারি না।
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি আগ্রাসন এবং বর্ণবাদী আচরণের প্রেক্ষিতে নানা শহরে পুলিশ বিভাগ সংস্কারের দাবি উঠছে। জনতার চাপে অনেক পৌর কাউন্সিল বাহিনীটির সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এর আগে গতকাল রোববার জর্জ ফ্লয়েড হত্যায় জড়িত মিনিয়াপোলিস পুলিশ বিভাগ ভেঙ্গে দেওয়ার পক্ষেও অঙ্গীকার করেন সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরগণ।
এই পদক্ষেপকে আন্দোলনকারী জনতা অভিনন্দন জানালেও, স্বভাবতই তাতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে মার্কিন পুলিশ ইউনিয়ন সমূহ। তাদের প্রভাবও বেশ শক্তিশালী। অন্য যে কোনো ইউনয়নের চাইতে তাদের প্রাক্তন সদস্যদের রাজনৈতিক প্রভাবও যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার শীর্ষ কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত। তারাই এখন দেশজুড়ে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এই প্রজন্মের মার্কিন নাগরিকদের মুখোমুখি এই অবস্থানের ক্ষেত্র অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুত ছিল। জর্জ ফ্লয়েডের করুণ মৃত্যু যা এখন বাস্তবতায় পরিণত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এখন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে অনেক বেশি চাপ অনুভব করছেন। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সংস্কারের।
কিন্তু সংস্কারের কথা বলা সহজ হলেও, তা করা ততটাই কঠিন। প্রাথমিক চ্যালেঞ্জটাই আসবে শক্তিশালী পুলিশ ইউনিয়নের তরফ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য যে কোনো ইউনিয়নের চাইতে পুলিশ সদস্যদেরই জোট সদস্য থাকার হার তুলনামুলকভাবে অনেক বেশি।
মিনিয়াপোলিসের মেয়র অবশ্য বলেছেন্, 'একটা কথা পরিষ্কার জেনে রাখা দরকার। আমরা এবার পুলিশ ইউনিয়নগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব।'
কিন্তু এই ব্যবস্থা নিয়ে সফল হওয়াটা এক দীর্ঘ লড়াইয়ে পরিণত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন পুলিশ সদস্যদের অনেকেই পরবর্তী জীবনে রাজনীতিতে জড়িত হয়েছেন, অনেকেই নির্বাচিত হয়েছেন জনপ্রতিনিধি হিসেবেও। তাই বাধাটা যে ব্যাপক আকারেই আসবে তাও সহজেই অনুমেয়।