সোলেইমানিকে হত্যা: কী প্রতিশোধ নিতে পারে ইরান
বাগদাদে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সামরিক জেনারেল কাসেম সোলেইমানি। কুদস বাহিনীর প্রধান হিসেবে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের কৌশলগত অপারেশনের নেতৃত্ব দিতেন তিনি।
শনিবার তার প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়ে এক শোক মিছিল বের করে এবং "আমেরিকার মৃত্যু চাই" বলে শ্লোগান দিতে থাকে।
তাকে হত্যা করায় আমেরিকার বিরুদ্ধে 'বড় ধরনের প্রতিশোধ' নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। তবে কিভাবে বা কোথায় এ প্রতিশোধ নেওয়া হবে, ইরান কি পাল্টা সামরিক হামলা চালাবে, নাকি সাইবার আক্রমণ হবে - তা নিয়ে সারা বিশ্বের সামরিক-কৌশল বিশেষজ্ঞরা নানা রকম বিশ্লেষণ দিচ্ছেন।
রোববার এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি বাংলা।
জেনারেল সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ইরানের তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ মারান্দি জানান, এই অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্য ধরে রাখার পরিকল্পনা পরাজিত করার জন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, "আমেরিকা সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব নষ্ট করতে চেয়েছিল, ইরাককে দখল করে রাখতে চেয়েছিল, ইসরায়েল লেবাননে দখলদারি করতে চেয়েছিল, সৌদি আরব এবং মার্কিনীরা ইয়েমেনকে পদানত করতে চেয়েছিল। জেনারেল সোলেইমানি এই মার্কিন আধিপত্যের সবগুলো পরিকল্পনা বানচাল করে দিয়েছেন। মার্কিনীদের সাম্রাজ্য কায়েমের চেষ্টায় তিনি ছিলেন কাঁটার মতো। এটাই তাকে হত্যা করার কারণ।"
তবে সোলেইমানির শূন্যস্থান পূরণ হবে না বা তাকে ছাড়া ইরানের আঞ্চলিক নীতি এগিয়ে নিতে সমস্যা হবে - এমনটা মানতে নারাজ মারান্দি।
বর্তমানে জেনারেল কাসেম সোলেইমানির জায়গায় এসেছেন জেনারেল এসমায়েল কানি। যিনি নিজেও একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি।
সোলেইমানির যোগ্য সহযোগীদের নিয়ে তিনি নতুন চিন্তা ও নতুন নির্দেশনা নিয়ে সফলভাবে কাজ করবেন বলে মনে করেন এ অধ্যাপক।
তিনি বলেন, "জেনারেল সোলেইমানি একজন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের লোক ছিলেন। তার স্থলে যিনি এসেছেন তিনিও অভিজ্ঞ। তাছাড়া ইরান কোন একক ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল নয়। তাই জেনারেল সোলেইমানির স্থান পূরণ হবে না; বিষয়টি এমন নয়।"
তার মানে কি এই যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা ভেবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা পূরণ হবে না?
এমন প্রশ্নের জবাবে মারান্দি বলেন, "আমি মনে করি আমেরিকা বোকার মতো কাজ করেছে। এটা ছিল যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এতে ইরান আরও ক্ষুদ্ধ হয়েছে, ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোকাবিলা করতে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছে।" তার মতে, সোলেইমানিকে হত্যা করে আমেরিকা আসলে ইরানকে আরও শক্তিশালী করে দিয়েছে।
এতে একজন ইরাকি কমান্ডারও নিহত হওয়ায়, ইরাক ও ইরান উভয় দেশের বিরুদ্ধেই যুক্তরাষ্ট্র এক প্রকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
ইরান এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলে আসছে, সেই প্রতিশোধ কি ধরনের হতে পারে, সেটা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
ইরানিরা পরিশীলিত জাতি, আমেরিকানদের মতো অমার্জিত ও পাশবিক নয় উল্লেখ করে মারান্দি বলেন, "ইরানিরা রাজনীতি করে দাবা খেলোয়াড়ের মতো। তারা হিসাব করে, অনেক চিন্তা ভাবনা করে এমন কিছু করবে যাতে আমেরিকানরা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ করে।"
ইরানের এই প্রতিশোধ নিয়ে নানা গুঞ্জন উঠেছে। এ আক্রমণ কি সামরিক হবে না সাইবার আক্রমণ হবে, মধ্যপ্রাচ্যে হবে না উত্তর আফ্রিকায় হবে, নানা জল্পনা চলছে।
আসলে কি ঘটবে, এমন কোনো ধারণা দিতে পারেননি মারান্দি। তবে তিনি বলেছেন, ইরানি এবং ইরাকিদেরও নানা ধরনের সক্ষমতা আছে। আমেরিকানদের অনেক দুর্বল জায়গা আছে।
তার মতে, ইরানিরা অনেক ভাবনাচিন্তা করে উপযুক্ত জবাব কি হবে তা ঠিক করবে - যাতে আমেরিকানদের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করতে হয়। তবে কী হবে সেটা এখনই বলা যাবে না।
তিনি জানান, ইরান যে আমেরিকাকে শাস্তি দেবে এ নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।
আমেরিকান, সৌদি এবং আমিরাতদের যা আছে ইরান তা সব ধ্বংস করে দেবে। তখন আমেরিকানরা বুঝবে যে তারা বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে।" তিনি বলেন।
এক্ষেত্রে ইরানের শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে ইরাক, আফগানিস্তান, ইয়েমেনসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলজুড়ে থাকা মিত্র দেশগুলো।
এছাড়া মার্কিন শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ইরানের অনেক রকম সক্ষমতা আছে বলেও মনে করেন মারান্দি।